রমজানের শেষ ১০ দিনের আমল
রমজানের পুরো মাসটি ইবাদতের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ হলেও এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রমজানের শেষ ১০ দিন। রমজানের শেষ ১০ দিনের আমল এর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। রমজানের শেষ ১০ দিনের আমল গুলোর মধ্যে এমন একটি রাত রয়েছে সেই রাতে ইবাদতের মাধ্যমে হাজার বছর ধরে ইবাদত করার চাইতেও বেশি সব হাসিল করা যায়।
আজকে আমরা আলোচনা করব রমজানের শেষ ১০ দিনের আমল নিয়ে। পুরো পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে
পড়ার মাধ্যমে জেনে নেই রমজানের শেষ ১০ দিনে কি কি আমল করবেন এবং এই আমল
গুলো করার মাধ্যমে কিভাবে অসংখ্য সওয়াব লাভ করবেন চলুন তাহলে শুরু করা যাক
রমজানের শেষ ১০ দিনে আমল সম্পর্কে।
আলোচনায় যা থাকছেঃ রমজানের শেষ ১০ দিনের আমল
রমজানের শেষ ১০ দিনের আমল
রমজানের এই শেষ দশ দিন প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উচিত ইবাদত বন্দেগীর মধ্যে
দিয়ে কাটানো। কারণ, রমজানের শেষ দশ দিনের আমল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রমজানের শেষ
১০ দিন কে বলা হয় নাজাতের ১০ দিন। 'নাজাত' অর্থ যার জাহান্নাম থেকে
মুক্তি। এই প্রসঙ্গে এক হাদিসে মুহাম্মদ (সা) বলেছেন যে ' ব্যক্তি রমজান পেল অথচ
যার নাম থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারল না তার মতন অভাগা আর দ্বিতীয়টি নেই। ' এই
হাদিস থেকে স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায় যে যার নাম থেকে মুক্তি লাভের জন্য
রমজানের শেষ ১০ দিনের আমল এর গুরুত্ব কতখানি কারণ বলেই দেওয়া হয়েছে যে এই
শেষ দশ দিন নাজাতের দিন ।
রমজানের শেষ ১০ দিনের আমল গুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের তসবি- তাহলীল , জিকির
- আজগার , দরুদ - কালেমা পাঠ করা , দান সদকা করা ,বেশি কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা
, নফল নামাজ বেশি বেশি পড়া ,ইস্তেগফার পাঠ করা , ফিতরা আদায় করা।
এগুলো ছাড়াও রমজানের শেষ ১০ দিনের আমল এর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুইটি আমল
হলো, শবে কদরের রাত্রি জেগে ইবাদত করা এবং ১০ দিন কি চেকআপ পালন করা। মধ্যে দিয়ে
অসংখ্য হাসিল এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করা যায়।
শবে কদরের আমল
রমজানের শেষ ১০ দিনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ রাত্রিটি হলো শবে কদরের রাত্রি এই
রাত্রে আমলের মধ্যে দিয়ে অসংখ্য সওয়াব লাভ করা যায় এই কারণে প্রত্যেকেরই উচিত
শবে কদরের রাত্রিতে উদযাপন করা এই রাত সন্ধ্যা থেকে আল্লাহর রহমতে ভরপুর হয়ে
থাকে। শবে কদরের রাতে ইবাদতের জন্য বিশেষ একটি দোয়া রয়েছে, যে দোয়াটি সম্পর্কে
মহানবী(সা) বলেছেন - তোমরা যারা শবে কদরের রাত্রি পাবে তারা যেন এ দোয়াটি বেশি
বেশি পাঠ করে,
দোয়াটি হল -" আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নী।" এর অর্থ
হলো-হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই তুমি ক্ষমাশীল আমাকে ভালোবাসো অতএব আমাকে ক্ষমা করে
দাও।
শবে কদরের রাত্রিতে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া উচিত কারণ নামাজ হল ইবাদতের মধ্যে
সর্বশ্রেষ্ঠ শবে কদরের রাতে নামাজ পড়ার নিয়ত হলো,
নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাআতাই ছালাতিল লাইলাতুল কাদরী
মুতাওয়াজিহান ইলা জিহাতিল কাবা্তিস শরিফাতি আল্লাহ আকবর।
ইতেকাফ
রমজান মাসে শেষ ১০ দিনের মধ্যে আরেকটি সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত বা আমল হল ইতেকাফ করা । রমজানের ২০ তারিখে সূর্যাস্তের পর থেকে শুরু করে রমজানের শেষ পর্যন্ত-পুরুষদের জন্য যে মসজিদের রীতিমতো জামাত হয় এমন মসজিদে এবং মেয়েদের জন্য নিজ নিজ ইবাদত কক্ষে পাক পবিত্র অবস্থায় কেবলমাত্র ইবাদতের উদ্দেশ্যে নির্জনে বসবাস করা কি ইত্তেকাফ বলে। ইতেকাফ সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কেফায়া।
গ্রামবাসীদের মধ্যে থেকে কেউ একজন ইতেকাফ করলেই সকল গ্রামবাসী এই সুন্নত কাজের সওয়াব পেয়ে যাবে। কিন্তু গ্রামের কেউই যদি ইতেকাফ না করে তাহলে সুন্নত ছেড়ে দেওয়ার জন্য গ্রামবাসীর সকলকে গুনাগার হতে হবে।মহানবী (সা) রমজানের শেষ দশ দিন ইতেকাফরত অবস্থায় থাকতেন। ইতিকাফ কারি ব্যাক্তি নিজের ঘরে বা মসজিদে খাওয়া-দাওয়া এবং পানাহার করবে। শুধু খাবার আনা নেওয়ার জন্য কোন লোক না থাকলে এবং প্রস্রাব পায়খানার প্রয়োজনে অথবা ফরজ গোসলের প্রয়োজনে বাইরে যেতে পারবে।
এই কাজগুলো ছাড়া অন্য কোন দুনিয়াবী কাজের জন্য কিংবা স্ত্রী সঙ্গম করলে
ইতেকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। ইতেকাফ ছেড়ে দিতে হবে এবং পাক পবিত্র হওয়ার পরে
রোজা রেখে শুধু সেই দিনগুলোর পালন করলেই চলবে। ইত্তেফাকরত অবস্থায়
দুনিয়াবী কোন কাজ বা কথাবার্তার সাথে যুক্ত হওয়া যাবেনা এবং একেবারে এমনি এমনি
চুপচাপ বসে থাকা যাবেনা। ইতেকাফের এই দশ দিন কোরআন তেলাওয়াত তসবিহ ,তাহলিল ,
জিকির , দরুদ ইত্যাদি পাঠের মাধ্যমে কাটাতে হবে।
ফিতরা দেয়া
ফিতরা দেয়াও রমজানের শেষ ১০ দিনের আমল গুলোর মধ্যে একটি ধরা হয়। ফিতরা রমজানের ভুল ত্রুটি দূর করার ছাদকা হিসেবে দেওয়া হয়। ফিতরা দেওয়ার নিয়ম হল , এক সের বা এর সমপরিমাণ মূল্য কোন গরীবকে দান করতে হবে। সচ্ছল ব্যক্তিবর্গ নিজের পরিবারের জন্য পরিবারের সকল সদস্যের পক্ষ হতে আদায় করতে হবে । ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। এ প্রসঙ্গে মহানবী(সা) বলেছেন ' যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোজা পালন করলো অথচ ফিতরা আদায় করল না তার রোজা আসমান এবং পৃথিবীর মাঝখানে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। '
শেষ কথা , রমজানের শেষ ১০ দিনের আমল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ সুতরাং এই শেষ ১০ দিন অবহেলায় না কাটিয়ে বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগী করে, নামাজ কালাম এর মধ্যে দিয়ে কাটানোর চেষ্টা করুন এবং রমজানের শেষ ১০ দিনের বিজোড় রাত্রি গুলোতে শবে কদরের তালাশ করুন কেননা শবে কদরের রাতে ইবাদত করার মতন রাত আরেকটি ও নেই । আপনারা এই পোষ্টের উপর আলোচনা গুলোর মধ্যে থেকে জানতে পেরেছেন রমজানের শেষ ১০ দিনের আমল সম্পর্কে । এ আমল গুলো যথাযথভাবে পালন করুন এবং অসংখ্য সোয়াব হাসিল করুন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে রমজানের শেষ ১০ দিনর আমল করার তৌফিক দান করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url