তারিখ অনুযায়ী মাসিক না হওয়ার কারণ
প্রতিমাসে একবার করে মাসিক হওয়া এটি মেয়েদের সুস্থ এবং স্বাভাবিক প্রজননের লক্ষণ। কিন্তু তারিখ অনুযায়ী মাসিক না হওয়ার কারণ গুলো সম্পর্কে অনেকেরই সঠিক ধারণা না থাকার কারণে সময়মতো সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া যায় না যার ফলে ভবিষ্যতে মেয়েদের প্রজননের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। এই কারণে তারিখ অনুযায়ী মাসিক না হওয়ার কারণ গুলো সকলেরই ভালোভাবে জেনে রাখা উচিত।
আপনার যদি অনিয়মিত মাসিক হয় তাহলে অবশ্যই তারিখ অনুযায়ী মাসিক না হওয়ার
কারণগুলো উদঘাটন করুন এবং সময় থাকতে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। কারণ
অনিয়মিত মাসিক একজন মহিলা শরীরের উপরে দীর্ঘমেয়াদি এবং ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে
পারে। আপনাদের সকলকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে আজকে এই পোস্টে আলোচনা করা হবে তারিখ
অনুযায়ী মাসিক না হওয়ার কারণ এবং এর
সমাধান সম্পর্কে। আপনার যদি তারিখ অনুযায়ী মাসিক না হওয়ার কারণ গুলো জানা না থাকে তাহলে দেরি
না করে এ বিষয়গুলো আজই জেনে নিন।
সূচিপত্রঃ তারিখ অনুযায়ী মাসিক না হওয়ার কারণ
- দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণ
- অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণে
- মাসিক না হলে ঔষধ
- দ্রুত মাসিক হওয়ার উপায়
- কতদিন মাসিক না হলে গর্ভবতী হয়
- হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার কারণ
- হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেলে করণীয়
দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণ
সাধারণত ১০ বছর থেকে শুরু করে ৪৫ বছর বয়সী মহিলাদের প্রতি মাসের নির্দিষ্ট দিনে
জল থেকে যে রক্তটি বের হয়ে আসে সেটিকে মাসিক বলে, মাসিক হওয়া এটি মেয়েদের
সৃষ্টি গত। প্রতি মাসে নিম্নের ৩ থেকে ১০ দিন মাসিক হওয়া এটি খুবই স্বাভাবিক এবং
সাধারন ব্যাপার কিন্তু কখনো কখনো দেখা যায় যে দুই মাস অনেকের মাসিক বন্ধ হয়ে
থাকে।
আপনি জানেন কি দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণগুলো কি। দুই মাস মাসিক না হওয়ার
কারণ সম্পর্কে আপনার যদি ধারণা না থাকে তাহলে উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই এই
পোস্টের মাধ্যমে আপনি দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণ সম্পর্কে একটি ক্লিয়ার ধারণা
পেয়ে যাবেন। চলুন তাহলে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করি।
প্রতি মাসে মেয়েদের নিয়মিত মাসিকের প্রক্রিয়াটি ব্যাহত হলে অথবা দুই তিন মাস
পর পর মাসিক হওয়ার সমস্যাটিকে অনিয়মিত মাসিকের পর্যায়ে ফেলা যায়। এই অনিয়মিত
কিংবা দুই মাস পর পর মাসিক হওয়ার মূল কারণগুলো হলো।
আরোও পড়ুনঃ
মাসিক না হওয়ার কারন সম্পকে জানুন।
দুশ্চিন্তাঃ অতিরিক্ত স্ট্রেস অথবা দুশ্চিন্তার ফলে হঠাৎ করে দেখা
যায় দুই মাস মাসিক বন্ধ হয়ে থাকে। অন্য কোন কারণ ছাড়া শুধু যদি দুশ্চিন্তার
কারণে দুই মাস মাসিক বন্ধ থাকে তাহলে, স্ট্রেস বা চিন্তা দূর হয়ে গেলে মাসিক
আবার নিয়মিত হয়ে যায়।
ওজন হ্রাসঃ দ্রুত এবং অতিরিক্ত ওজন কমে যাওয়ায় পরপর দুই মাস মাসিক
বন্ধ হওয়ার আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ। আপনার বয়স এবং উচ্চতা অনুযায়ী আপনার
শারীরিক ওজন যদি অনেক কম হয় তাহলে এটি তারিখ অনুযায়ী মাসিক না হওয়ার কারণ হতে
পারে।
অতিরিক্ত ওজনঃ অতিরিক্ত শারীরিক শারীরিক ওজন অনিয়মিত মাসিক বা দুই
মাস পর পর মাসিক হওয়ার আরেকটি
উল্লেখযোগ্য কারণ।
আপনার ওজন এবং বয়স অনুযায়ী শারীরিক ওজন অতিরিক্ত কমে গেলে অথবা অতিরিক্ত বেড়ে
গেলে দুইটির কারণেই মাসিক বন্ধ হওয়ার সমস্যাটি দেখা দিবে।
জন্মনিরোধক পদ্ধতিঃ আপনি যদি বিভিন্ন ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
অবলম্বন করেন তাহলে পরপর দুই মাস মাসিক বন্ধ হওয়া এটি খুব সাধারণ একটি ব্যাপার।
হরমোন জনিত কারণেঃ বিভিন্ন ধরনের হরমোনের তারতম্যের কারণে বিশেষ করে
থাইরয়েড হরমোনের কম বেশি হওয়ার কারণে মাঝে মাঝে দুই মাস মাসিক না হওয়ার মতন
সমস্যায় পড়তে হয়।
খাদ্যভাসঃ আপনি যদি আপনার খাবার দাবার রুটিন মাখিক না করেন অথবা
অস্বাস্থ্যকর, ফাস্টফুট জাতীয় খাবার অতিরিক্ত খান তাহলে আপনার দুই মাস মাসিক
বন্ধ হওয়ার সমস্যা দেখা দিবে।
অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ
অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে অনেক সময় দুশ্চিন্তায় পড়তে
হয়। অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ গুলো আপনার যদি জানা না থাকে
তাহলে এই বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াস ভাবে ভাবুন এবং দ্রুত অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক
বন্ধ হওয়ার কারণগুলো উদঘাটন করে সমাধানের চেষ্টা করুন। কারণ অনিয়মিত মাসিক
কখনোই কোন শারীরিক সুফল বয়ে আনে না বরঞ্চ এটি ধীরে ধীরে শারীরিক বিভিন্ন ধরনের
জটিলতা সৃষ্টি করে।
অবিবাহিত মেয়েদের
তারিখ অনুযায়ী মাসিক না হওয়ার কারণ গুলো নিজে একে একে তুলে ধরা হলো,
ডিম্বাশয় এর অপরিপক্ষতাঃ ১০থেকে ১২ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের মাসিক
বন্ধ হওয়ার কারণ কি পেছনে যে বিষয়টি কাজ করে সেটি হল ডিম্বাশয় এর অপরিপক্ষতা।
ডিম্বাশয় পরিপক্ক অথবা পরিণত হতে বেশ কয়েক বছর সময় লাগে। এ কারণে শুরুর দিকে
২-৩ বছর মেয়েদের যদি মাসিক বন্ধ থাকে তাহলে খুব একটা ভয়ের কোন কারণ নেই তবে এটি
যদি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে তাহলে অবশ্যই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
স্ট্রেসঃ অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে
স্ট্রেস আরেকটি কারণ। এই স্ট্রেস এর কারণে বিবাহিত অবিবাহিত দুই ধরনের মেয়েদের মধ্যেই মাসিক বন্ধ
হওয়ার সমস্যাটি দেখা দেয়।
অস্বাস্থ্যকর খাবারঃ মাসিক বন্ধ হওয়ার আরেকটি প্রধান উল্লেখযোগ্য
কারণ হলো অস্বাস্থ্যকর খাবার। অবিবাহিত মেয়েরা সাধারণত বাইরের খাবার , বাইরের
ভাজাপোড়া, ফাস্টফুড জাতীয় খাবার বেশি খেয়ে থাকে আর এই কারণেই তাদের মাসিক বন্ধ
হওয়ার সমস্যাটি দেখা দেয়।
পুষ্টিকর খাবার না খাওয়াঃ অবিবাহিত মেয়েদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের
পুষ্টির চাহিদা থাকে, শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী যদি পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া হয়ে
থাকে তাহলে , অনেক অনিয়মিত মাসির এবং মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে থাকার সমস্যাটি প্রবল
ভাবে দেখা দেয়।
টিউমারঃ অনেক সময় জরায়ুর ভেতরে ছোট ছোট টিউমার তৈরি হয়। অনেক সময়
এই টিউমার গুলোর কারণে ও মাসিক বন্ধ হয়ে থাকে।
ওজনের হ্রাস বৃদ্ধিঃ অবিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রায় প্রায় এই
জিনিসটি দেখা যায় শরীরের অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি অথবা শরীরের অতিরিক্ত ওজন কম।
শরীরের অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি এবং শরীরের অতিরিক্ত ওজন কম হওয়া দুইটি মাসিক বন্ধ
হওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণ।
হরমোনাল প্রভাবঃ বিভিন্ন ধরনের হরমনার প্রভাবের কারণেও
অবিবাহিত মেয়েদের
মাসিক বন্ধ হওয়ার সমস্যাটি হয়ে থাকে।
মাসিক না হলে ঔষধ
রেগুলার মাসিক না হওয়া এটি কখনোই কোন শুভ লক্ষণ না সেই কারণে আপনাকে চেষ্টা করতে
হবে দ্রুত যাতে মাসিক রেগুলার হয় সেই ব্যবস্থাটি গ্রহণ করেন। এখন প্রশ্ন এসে
যায় মাসিক না হলে ঔষধ এর মাধ্যমে আপনি এই সমস্যার সমাধান করবেন নাকি ঘরোয়া
ভাবে। অনেক সময় ঘরোয়া ভাবে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে মাসিক না হওয়ার
সমস্যাটি সমাধান করা ,অনেকটা সময় এবং ধৈর্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এই জন্য
অনেকে মাছ না হলে ঔষধ এর শরণাপন্ন হয়। মাসিক না হলে কোন ওষুধ খেতে হবে সেগুলো
নিচে দেয়া হল,
মাসিক না হওয়ার এলোপ্যাথিক ওষুধঃ মাসিক না হওয়ার এলোপ্যাথি ওষুধগুলো হলো।
- Carbonica
- Amenoeehea
- Aconitum n.
- Viburnm op.
- Ferrum meta
- Natrum
মাসিক না হওয়ার হোমিও ওষুধঃ না হওয়ার হোমিও ওষুধ গুলোর তালিকা নিচে দেওয়া হল।
- পালসা টিল্লা
- ল্যাচেসিস
- সোপিয়া
- সিকেল কর্নাটাম
- লাইকোপোডিয়াম
কতদিন মাসিক না হলে গর্ভবতী হয়
অনেকেরই জানার আগ্রহ থাকে যে কত দিন মাসিক না হলে গর্ভবতী হয়। এবার আমরা
আলোচনা করবো কতদিন মাসিক না হলে গর্ভবতী হয় এই বিষয়টি নিয়ে। আমরা সবাই জানে
প্রতিমাসে তিন থেকে দশ দিন
মেয়েদের মাসিক হয়ে থাকে এবং এক মাসের মাসিক থেকে অন্য মাসের মাসিক হওয়ার মধ্যে ব্যবধান
সাধারণত ২৮ থেকে ৩৫ দিন হয়।
কিন্তু শারীরিক সম্পর্কের পরে কতদিন মাসিক বন্ধ থাকলে গর্ভবতী হবেন এই প্রশ্নটি
অনেকের মধ্যে থাকে। সাধারণত শারীরিক সম্পর্কের পর আপনার নিয়মিত মাসিক যদি না
হয় অথবা যেই দিন মাসিক হওয়ার কথা ছিল তার দু একদিন আগে বা পরে যদি মাসিক না
হয় তাহলে আপনাকে প্রেগনেন্সি টেস্ট করাতে হবে।
আরোও পড়ুনঃ
মেয়েদের সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায় সম্পকে জানুন
।
শারীরিক সম্পর্কের পর মাসিক না হলে যেদিন মাসিক হওয়ার কথা ছিল সেই দিন থেকে
গণনা শুরু করে কমপক্ষে ১৫ দিন থেকে ২০ দিন পরে প্রেগনেন্সি টেস্ট করালে আপনি
বুঝতে পারবেন যে আপনি গর্ভবতী কিনা। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে শারীরিক সম্পর্কের পর
মাসিকের নির্দিষ্ট টাইমে মাসিক নাহলে ১৫ থেকে ২০ দিন পরে বোঝা যাবে আপনি
গর্ভবতী কিনা তবে অবশ্যই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হলে আপনাকে প্রেগনেন্সি টেস্ট
করতে হবে। আশা করছি বিষয়টি আপনি ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।
হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার কারণ
অনেকের মধ্যেই হঠাৎ হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি দেখা যায়। তবে আপনি
কি জানেন হঠাৎ হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার কারণ কি। আবার মনে হয় অধিকাংশ মানুষই
হঠাৎ পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণগুলো নির্দিষ্ট ভাবে জানেন না। পিরিয়ড
বন্ধ হওয়ার কারণগুলো যারা জানেন না এই পোস্টটি তাদের জন্য তারা যদি জানতে
আগ্রহী হন তাহলে জেনে নিন হঠাৎ পিওর বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ,
- অতিরিক্ত স্ট্রেস বা মানসিক চাপ
- শরীরের ওজন অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়া
- শরীরের ওজন হঠাৎ করে কমে যাওয়া
- জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করা
- জরায়ুর ভেতরে ছোট ছোট টিউমার থাকা
- অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
- শরীরে হরমোনের তারতম্য হওয়া
- অপরিপক্ক ডিম্বাশয় এর কারণে
- বুকের দুধ খাওয়ানো
মন্তব্য, উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি তারিখ
অনুযায়ী মাসিক না হওয়ার কারণ এবং এর
ঘরোয়া সমাধান সম্পর্কে। আপনার মাসিক যদি অনিয়মিত হয় অথবা তারই অনুযায়ী মাসিক না হয় তাহলে অবশ্যই
তারিখ অনুযায়ী মাসে না হওয়ার কারণ গুলো খুঁজে বের করুন এবং সে অনুযায়ী
ব্যবস্থা গ্রহণ করুন, প্রয়োজন হলে ডাক্তারি পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url