পাইলসের কারণ - পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা
পাইলস খুব সাধারণ একটি রোগ হলেও এই রোগটি অত্যন্ত জটিল। আমরা অনেকেই এই ব্যাপারে মুখ খুলতে চাই না ।তাই যদি আমাদের পাইলসের কারণ এবং পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা গুলো জানা থাকে তাহলে হয়তোবা সাবধানতার মাধ্যমে কিছুটা হলেও এই রোগ থেকে আমরা ভালো থাকতে পারি।
সূচিপত্রঃ পাইলসের কারণ - পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা
- পাইলসের কারণ
- পাইলস হলে কি কি সমস্যা হয়
- পাইলসের প্রাথমিক চিকিৎসা
- পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা
- পাইলস থেকে কি ক্যান্সার হয়
- পাইলসের হোমিও ওষুধের নাম
- পাইলিসের এলোপ্যাথিক ওষুধের নাম
- পাইলসের ফোলা ভাব কমানোর উপায়
পাইলসের কারণ
আমাদের মলদ্বারের চারপাশে অনেকগুলো রক্তের শিরা রয়েছে,এই শিরাগুল মল আটকে রাখতে সাহায্য করে।পায়খানা কষার কারনে যখন এই শিরার ওপরের অংশ ছিড়ে যায় তখন সেখান থাকে রক্তপাত এবং প্রদাহ তৈরি হয়। এই প্রদাহ দীর্ঘ দীর্ঘদিন থাকার ফলে ইনফেকশনের এর সৃষ্টি হয়, প্রধানত এটি পাইলসের কারণ। অনেক সময় দীর্ঘদিন ধরে আমাশয় এর কারনেও মলদ্বারে ইনফেকশন হয় এবং সেখান থেকে পাইলসের সৃষ্টি হয়। পাইলসের নির্দিষ্ট কোন কারণ না থাকলেও যে কারণগুলোকে পাইলসের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ধরা হয় সেগুলোর নিচে একে একে তুলে ধরা হলো। পাইলসের সম্ভাব্য কারন গুলো হলোঃ
- পায়খানায় বেশি সময় ধরে বসে থাকা
- পায়খানা কষা হওয়ার কারণে জোরে চাপ দেয়া
- শরীরের ওজন অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া
- অনেকদিন আমাশয় ভোগা, যেটাকে বলা হয় ক্রনিক আমাশয়।
- পায়খানার বেগ আটকে রাখা
- প্রেগন্যান্ট অবস্থায় শরীরের ভেতরে চাপ বা প্রেসার বেশি থাকে এর ফলেও পাইলস হয়
পাইলস হলে কি কি সমস্যা হয়
আমাদের মধ্যে অনেকেই মনে করে মলদ্বারের সমস্যা মানে তাই , আসলে এই ধারণাটি
একেবারেই ভুল ধারণা। মলদ্বারে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে তাই বলে সব
সমস্যায় পাইলস নয়।মলদ্বারের কোন সমস্যা কে পাইলস বলা হয় সেটি বুঝতে হলে
আপনাকে জানতে হবে পাইলস হলে কি কি সমস্যা হয়।তাহলে জেনে নিন পায়েস হলে কি
কি সমস্যা হয় অথবা কোন কোন সমস্যা হতে দেখতে আপনি বুঝবেন আপনার পাইলসের সমস্যা
হয়েছে।
- পায়খানার দ্বারের সামনের অংশ ফুলে বেরিয়ে আসা
- পায়খানার দ্বারের আশেপাশে ব্যাথা এবং চুলকানি
- মলত্যাগের সাথে রক্ত যাওয়া
- পায়খানের দ্বারের পাশে এক বা একাধিক ছোট ছোট মাংসপিণ্ড দেখা দেওয়া এবং গুলোতে ব্যথা হওয়া
- মলত্যাগের পরে পায়খানার দ্বারে জল এবং যন্ত্রণা হওয়া
- কখনো ব্যথা সহ আবার কখনো ব্যথা ছাড়া রক্তপাত হওয়া
- বসলে ব্যাথা ও যন্ত্রণা হওয়া
পাইলসের প্রাথমিক চিকিৎসা
এই রোগটি নিয়ে মানুষ যেহেতু বাইরে খুব বেশি আলোচনা করতে চান না সেজন্য পাইলসের প্রাথমিক চিকিৎসা গুলো, আপনি প্রাথমিক পর্যায়ে করে দেখতে পারেন। অনেক সময় পাইলিসের প্রাথমিক চিকিৎসার ফলেও এটি সেরে যায়।পাইলস প্রাথমিক অবস্থায় থাকলে আপনাকে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে চলতে হবে, প্রথম থেকে সতর্কতার সাথে চললে অনেক সময পাইলস সম্পূর্ণ সেরে হয়ে যেতে পারে। তাহলে এবার জেনে নিন পাইলসের প্রাথমিক চিকিৎসা করার নিয়ম গুলো,
পাইলস হলে সেই জায়গাটিতে হালকা গরম পানি দিন। এতে পাইলসের সাথে সাথে এখানকার
ব্যথা আস্তে আস্তে দূর হবে ।
আরোও পড়ুনঃ পেটের মেদ কমানোর উপায়।
তুলনামূলক মন নরম জায়গায় বসার চেষ্টা করুন সত্য জায়গাগুলো এড়িয়ে চলুন কারণ
শক্ত জায়গায় বসলে পাইলসের প্রদাহের স্থানে চাপ লেগে ইনফেকশন বেশি হয়ে
যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বিছানায় শুলে অব্যশই পায়ের নিচে ২/১ টি বালিশ দিয়ে পা দুটো একটু উচুঁ করে রাখতে হবে। এতে পাইলসের রক্তের শিরা গুলোতে রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকবে এবং পাইলসের প্রদাহ থেকে মুক্ত থাকা যাবে।
মলদ্বার পরিষ্কার করার সময় আলতোভাবে পরিষ্কার করতে হবে বেশি জোরে ঘষাঘষি করা যাবে না।
পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা
পাইলস এমন ধরনের একটি রোগ যেই রোগের কথা অন্যের সাথে ভালোভাবে শেয়ার করা
যায় না আবার এর যন্ত্রণা সহ্য করার মতো নয়। যেহেতু এই রোগের বিষয়ে বাইরে
খোলামেলা আলোচনা করা যায় না সেজন্য আমরা অনেক সময় বিভিন্ন মাধ্যমে এর ঘরোয়া
চিকিৎসা গুলো জানার চেষ্টা করি। এই কথা বিবেচনা করে পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা গুলো
তুলে ধরা হলো। টাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা গুলো হল।
মুলাঃ পাইলসের রোগীদের জন্য মুলা একটি আদর্শ খাবার। পাইলসের প্রদাহ
বা ইনফেকশন কমাতে মুলা কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। পাইলসের রোগীরা মুলার সবজি
তৈরি করে অথবা মুলার জুস তৈরি করে দুই ভাবেই খেতে পারেন।
বেদানাঃ আমরা সবাই জানি বেদানা আমাদের শরীরের রক্ত তৈরিতে সাহায্য
করে। বেদানার আরও একটি গুণ রয়েছে সেটি হল বেদানা পাইলস সারাতেও ভীষণভাবে
কার্যকর, বেদানার দানাগুলো ছড়িয়ে নিয়ে কিছু পানির ভেতরে দিয়ে ভালোভাবে সিদ্ধ
করুন এরপর বেদানার দানা সিদ্ধ করা পানিটি প্রতিদিন দিনে অন্ততপক্ষে দুইবার করে
পান করার চেষ্টা করুন আপনার পায়েসের সমস্যা সারাতে এটি খুব ভালো কাজ
করবে।
ডুমুরঃ ডুমুরের বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গুন রয়েছে তার মধ্যে একটি গুণ
হলো এর মধ্যে রয়েছে পাইল সরানোর ক্ষমতা। পাইলসের জন্য রান্না করা ডুমুর যেমন
উপকারী তেমনি ডুমুর সারারাত ভিজিয়ে রেখে সেই ভেজানো পানিটি পান করাও পাইলসের
রোগীর জন্য খুব উপকারী। প্রথমে ডুমুর কেটে নিয়ে কিছুটা পানির ভেতরে এই ডুমুর
গুলো ভিজিয়ে রাখুন , সারারাত ভেজার পরে ডুমুরের মধ্যে থেকে যেই রসটি বের হবে সেই
রসটি দিনে দুই থেকে তিনবার খাওয়ার চেষ্টা করুন এভাবে নিয়মিত পান করতে থাকলে খুব
তাড়াতাড়ি আপনার পায়েসের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
ওজন কমানোঃ শরীরের অতিরিক্ত এবং অস্বাভাবিক ওজন থেকেও পাইলসের
সমস্যা সৃষ্টি হয়। এই কারণে আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে আপনার বয়স এবং
শারীরিক গঠন অনুযায়ী আপনার ওজন যেন বেশি না হয়ে যাই। নিয়মিত শরীরচর্চার
মাধ্যমে অবশ্যই আপনার ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে তবেই আপনি পাইলস থেকে সুস্থ
থাকতে পারবেন ।
পায়খানার চাপ আটকে না রাখাঃ পাইলস রোগ সৃষ্টি হওয়ার তৈরি হওয়ার আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো পায়খানার চাপ আটকে রাখা । অনেক সময় দেখা যায় মানুষ পায়খানা চাপ অনেক সময় ধরে আটকে রাখে, পায়খানা চাপ আটকে রাখার কারণেও পায়েল হয় এই কারণে উচিত হবে পায়খানার চাপ পারতো পক্ষে আটকে না রাখার।
পাইলস থেকে কি ক্যান্সার হয়
অনেকের মধ্যেই এই প্রশ্নটি জেগে থাকে , পাইলস থেকে কি ক্যান্সার হয় । আজকে আপনাদেরকে জানাবো পাইলস থেকে কি ক্যান্সার হয় ,এ প্রশ্নের উত্তর। পাইলস রোগটি তখনই হয় যখন মলদ্বারে কোন প্রদাহ বা ইনফেকশনের সৃষ্টি হয় । আর যে কোন ইনফেকশন বা প্রদাহ দীর্ঘদিন থাকলে, সেটি যদি ক্রনিক প্রদাহে বা ক্রনিক ইনফেকশনে পরিণত হয় তাহলে অবশ্যই সেখান থেকে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । আর পাইলসের প্রদাহ যেহেতু ইনফেকশন থেকে হয় তাই দীর্ঘদিন পাইলসের চিকিৎসা না করালে এই ইনফেকশন থেকে ক্যান্সারের রূপ নিতে পারি। পাইলস থেকে রেকটাম ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়। আর পাইলস থেকে ক্যান্সার হওয়ার ফলে রোগীর মৃত্যু ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
পাইলসের হোমিও ওষুধের নাম
রোগীর শারীরিক বৈশিষ্ট্য, তারা আচার-আচরণ এবং চালচলনের ভিত্তিতে যদি ঠিকভাবে
হোমিও ওষুধ প্রয়োগ করা হয় তাহলে অপারেশন ছাড়াও দ্রুত পাইলস থেকে মুক্তি
পাওয়া সম্ভব। এ কারণে আপনাদের কথা চিন্তা করে পাইলসের হোমিও ওষুধের নাম এর
তালিকা গুলো তুলে ধরা হলো। কার্যকরী পাইলসের হোমিও ওষুধের নাম গুলো হল।
- অ্যালোস
- সালফার
- ক্যালকেরিয়া ফ্লরিকা
- নাক্স ভোমিকা
- আর্সেনিক অ্যালবাম
- মিউরিয়াটিক অ্যাসিড
- গ্রাফাইট
- হ্যামেলিস
- অ্যালো সোকোট্রিনা
পাইলিসের এলোপ্যাথিক ওষুধের নাম
পাইলসের অসুখ মানেই একটি বিব্রতকর পরিস্থিতি। এই অসুখে অনেকেই
ডাক্তারের কাছে অথবা বাইরে আলোচনা করতে পছন্দ করেন না। পাইলসের রোগটি নিয়ে
অন্যের সাথে এমনকি ডাক্তারের সাথে আলোচনা করা অনেকের কাছে এটি একটি লজ্জার বিষয়
হয়ে দাঁড়ায়। বিভিন্ন কারণেই আমরা পাইলসের অসুখ হলে বা সমস্যা হলে একা একাই
ওষুধ খেয়ে থাকে কিন্তু এটি একেবারেই ঠিক নয় যেকোন ওষুধ খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই
আমাদেরকে রেজিস্টার ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত তারপরেও
যারা পাইলসের এলোপ্যাথিক ওষুধের নাম জানতে চান তাদের জন্য নিচে পাইলসের
এলোপ্যাথিক ওষুধের নাম গুলো দেয়া হলো।
- Normanal 500mg
- Daflon 1000mg
- Daflong 500mg
- Lignocain gel
- Erian
- Osmolax
পাইলসের ফোলা ভাব কমানোর উপায়
পাইলস হলে অনেক সময় মলদ্বার ফুলে ওঠে এবং সেগুলোতে ব্যথা হয় অস্বস্তি লাগে ।
পাইলসের এই ফোলা ভাব কমানোর জন্য বেশ কিছু উপায় রয়েছে। আপনার যদি পায়েসের ফোলা
ভাব কমানোর উপায় গুলো না জানা থাকে তাহলে অবশ্যই আজই জেনে নিন। পায়েসের ভোলা
ভাব কমানোর উপায় গুলো হলো।
পাইলসের কারণে আপনার মলদ্বার যদি ফুলে ওঠে তাহলে একটি তুলাই একটু অ্যাপেল সিডার
ভিনেগার লাগিয়ে ফুলে ওঠায় স্থানে আলতোভাবে লাগিয়ে নিন এতে শুরুতে
আপনার আক্রান্ত জায়গাগুলোতে একটু জ্বালাপোড়া করবে ঠিকই কিন্তু
কিছুক্ষণ পর আপনার জ্বালাপোড়া এবং ফোলা ভাব দুটোই কমে যাবে।
অলিভ অয়েল শরীরের যেকোনো জায়গার প্রদাহ কমাতে খুব ভালো কাজ করে , এই কারণে আপনি
কিছুটা অলিভ অয়েল যদি পাইলসের ফোলা জায়গা গুলোতে ব্যবহার করেন তাহলে সেখানকার
ফোলা ভাব দূর করতে অলিভ অয়েল সাহায্য করবে।
অ্যালোভেরা জেল পাইলসের ফোলা ভাব কমাতে জাদুর মতন কাজ করে। পাইলসের খোলা জায়গা
গুলোতে এলোভেরার পাতা থেকে জেল বের করে ফোলা জায়গা গুলোতে লাগালে খুব তাড়াতাড়ি
খোলা ভাব দূর হয় অবশ্যই আক্রান্ত স্থানগুলোতে লাগানোর পূর্বে অবশ্যই
কিছুক্ষণ ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে নিন এতে আপনি আরও বেশি আরাম পাবেন।
আরোও পড়ুনঃ নাকের পলিপসের ওষুধ ও নাকের মাংস কমানোর উপায়।
পাইলসের ফোলা ভাব কমানোর জন্য কয়েক বরফের কিউব আইস ব্যাগ এ অথবা
কাপড়ে পেঁচিয়ে মলদ্বারে কিছুক্ষণ চেপে ধরে রাখুন এতে ফোলা ভাব কমে যাওয়ার সাথে
সাথে আপনার ব্যথা এবং যন্ত্রণা কমে যাবে এবং আপনি অনেকটা আরাম অনুভব করবেন।
শেষ কথা, বর্তমান যুগে পাইলস একটি কমন এবং জটিল রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই পাইলসের কথা গোপন রাখি এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত তাকে মরণব্যাধি রেকটাম ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করতে হয় যার শেষ পরিণতি হয় মৃত্যু। এই কারণে ফাইল সম্পর্কে প্রথম থেকে সচেতন হয় এবং পাইলসের কারণ ও পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা গুলো জেনে রাখুন। আপনি যদি সঠিকভাবে পাইলসের কারণ এবং পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা গুলো জেনে রাখেন তবে আপনি খুব সহজেই এটি থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url