কুরবানির দোয়া - ঈদুল আযহা নামাজের নিয়ত
মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব গুলোর মধ্যে ঈদুল আযহা অন্যতম। জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আযহা উদযাপন করা হয় আর এই ঈদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো ঈদের নামাজ আদায় করা এবং পশু কোরবানি করা। আর এই কারণে আজকে পোষ্টের মাধ্যমে আমরা আলোচনা করব ঈদুল আযহা নামাজের নিয়ত ও কুরবানির দোয়া নিয়ে। কুরবানির দোয়া যদি না জেনে থাকেন তাহলে এই পোস্টটির মাধ্যমে জেনে নিতে পারেন।
আজকের এই পোস্টে আপনাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হবে কোরবানির দোয়া সম্পর্কে। ঈদুল আযহার মূল উদ্দেশ্য যেহেতু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু কুরবানী করা, সুতরাং কুরবানির দোয়া জানা জরুরী। আপনি যদি কুরবানির দোয়া না জেনে থাকেন তাহলে এই পোস্টটি করার মাধ্যমে কুরবানীর দোয়া এবং ঈদুল আযহা নামাজের নিয়ত সম্পর্কে জেনে নিন।
সূচিপত্রঃকুরবানির দোয়া - ঈদুল আযহা নামাজের নিয়ত
- কুরবানী ঈদ
- ঈদুল আযহা নামাজের নিয়ত
- কুরবানির দোয়া
- কুরবানি সম্পর্কে ইতিহাস
- কুরবানীর আদেশ ও নির্দেশ
- কুরবানির সাওয়াব
- কুরবানীর প্রয়োজনীয় মাসায়ালা
কুরবানী ঈদ
আজকে আপনাদের জানাবো কোরবানি ঈদ বা ঈদুল আযহা কাকে বলে।জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখে
শরিয়তের নির্দেশ অনুসারে দুই রাকাত নামাজ জামাতের সাথে পড়ার পরে পশু জবাই করে
আনন্দ উৎসব করাকে ঈদুল আযহা বা কুরবানী ঈদ বলে। কুরবানি আরবি শব্দ, এর অর্থ হল
সন্তুষ্টি অর্জন করা বা আল্লাহর দিদার লাভ করার জন্য গরু , ছাগল , মেষ , দুম্বা ,
উট অথবা মহিষ জবাই করতে হয়। জিলহজ মাসের ১০,১১ ,১২ তারিখের মধ্যে আল্লাহকে
খুশি করার উদ্দেশ্যে পশু জবাই করাকে কুরবানী ঈদ বলে।জামাতের সাথে
ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। এ দিনে ঈদুল আযহার নামাজ শেষে ধনী
ব্যক্তিদের পক্ষে একটি হালাল পশু আল্লাহর নামে জবাই করা ওয়াজিব। হাদিস শরীফে
উল্লেখ আছে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন -যে ব্যক্তি ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কোরবানি
না করে সে যেন ঈদগাঁয়ের কাছেও না আসে।
ঈদুল আযহা নামাজের নিয়ত
যেকোনো নামাজ বা যেকোনো ভালো কাজের আর শুরুতে নিয়ত করে নিতে হয়। অন্যান্য
নামাজের মতন ঈদুল আযহা নামাজের নিয়ত রয়েছে। ঈদুল আযহা নামাজের নিয়ত সম্পর্কে
অনেকেই হয়তো যাবেন আবার অনেকেই জানেন। আবার বছর ঘুরে আসতে আসতে অনেকের হয়তো মনে
নাও থাকতে পারে ঈদুল আযহা নামাজের নিয়টি। আপনি যদি ঈদুল আযহা নামাজের নিয়ত টি
না জেনে থাকেন অথবা ভুলে গিয়ে থাকেন। তাহলে যে আপনার জন্য ঈদুল আযহা নামাজের
নিয়ত এর উচ্চারণ বাংলায় দেয়া হবে।
কুরবানির দোয়া
কুরবানীর পশু জবেহ করার জন্য বা কোরবানি দেয়ার জন্য কোরবানির দোয়া জানা
অত্যন্ত জরুরী। আল্লাহ কে খুশি করার জন্য ঈদুল আযহার দিনে কুরবানীর সময় গিয়ে
দোয়াটি পড়তে হয় সেটি যদি আপনার জানা না থাকে তাহলে, দোয়াটি অবশ্যই জেনে
নিন। কোরবানি করার দোয়াটি যারা জানেন না তাদের জন্য এই দোয়াটির আরবি এবং
বাংলা উচ্চারণ নিচে দেওয়া হল।
কুরবানীর ইতিহাস
এবার আমরা জানবো পূর্ণিমার সম্পর্ক। অথবা বলতে পারেন আলোচনার বিষয়বস্তু হলো ,কুরবানী কখন থেকে শুরু হল সেই সম্পর্কে জেনে নেওয়া। ইসলামের ইতিহাস থেকে জানা যায় যে হযরত আদম আলাই (আ) এর দুই পুত্র হাবিব ও কাবিল এর ওপর সর্বপ্রথম কুরবানীর আদেশ এসেছিল। কুরবানী সম্পর্কে পবিত্র কোরআন শরীফে বলা হয়েছে- এবং , তারা দুজনই যখন কোরবানি করলো , একজনের কুরবানী কবুল হলো এবং অপরজনের কুরবানী কবুল হলো না (সূরা মায়েদা , আয়াত ২৭)। হযরত আদম(আ) এর পুত্র হাবিল মনের আগ্রহে আল্লাহপাকের দিদার হাসিল করার জন্য একটি অতি সুন্দর দুম্বা কুরবানীর জন্য পেশ করেন। এবং আল্লাহ পাক তার কুরবানী কবুল করেন , অপরদিকে কাবিল অমনোযোগ সহকারে খাদ্যের অনুপযোগী খাদ্যশস্য কোরবানি শুরু পেশ করলেন আন্তরিকতার অভাবে আল্লাহ তার কোরবানি কবুল করে নিন।
আরো পড়ুনঃ ইসলামে মেয়েদের চুল কাটার নিয়ম
এরপর হযরত ইব্রাহিম আলাই সাল্লাম এর উপর আল্লাহর আদেশ হয় তার প্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আ) কে কোরবানি করার জন্য। সর্বপ্রথমে হযরত ইব্রাহিম (আ) কে আল্লাহতালা স্বপ্নের মাধ্যমে এই আদেশ দেন এবং বলেন - "হে ইব্রাহীম (আ) তুমি তোমার প্রিয় বন্ধু আমার নামে কোরবানি করো"। এরপর তিনি এক শত উট আল্লাহর নামে কোরবানি করলেন। তারপরের রাতেও দিনে আগের মতন একই স্বপ্ন দেখলেন-পরের দিন সকালে তিনি আল্লাহর নামে একশত গরু কোরবানি করেন।
কিন্তু এর পরেও ঠিক একই স্বপ্ন আল্লাহ পাক তাকে আবার দেখান। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে হযরত ইব্রাহিম (আ) অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়েন, তখন আল্লাহ পাক তাকে আবার আদেশ করে বলেন-তুমি তোমার সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটি আমার জন্য কোরবানি করো। এরপর হযরত ইব্রাহিম (আ) বুঝতে পারে যে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটি তার সন্তান হযরত ইসমাইল (আ), এবং আল্লাহ পাক তাকে কুরবানীর জন্য ইশারা করছে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে হযর ইব্রাহিম (আ) তার অত্যন্ত আদরের পুত্র হযরত ইসমাইল(আ) কুরবানীর জন্য নিয়ে যান। কোরবানি দেওয়ার জন্য হযরত ইসমাইল (আ) এর চোখ , হাত , পা কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে আল্লাহকে খুশি করার জন্য কুরবানীর উদ্দেশ্যে প্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আ) এর গলায় ছুরি চালানো শুরু করেন। এই ঘটনা দেখে সৃষ্টি কর্তা পরম দয়ালু আল্লাহতালা খুশি হয়ে যান, এবং কোরবানির স্থানে হযরত ইসমাইল(আ) এর পরিবর্তে পাঠিয়ে দেন এবং হযরত ইসমাইল(আ) এর পরিবর্তে দুম্বা কুরবানী হয়ে যায় ঠিক তখন থেকে কোরবানির প্রচলন শুরু হয়।
কুরবানীর আদেশ ও নির্দেশ
এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক কুরবানীর আদেশ ও নির্দেশ সম্পর্কে। কুরবানী করা
ওয়াজিব। পবিত্র কুরআন পাকে আল্লাহতালা বলেছেন আমি জান্নাতের বিনিময়ে মুমিনদের
জান মাল ক্রয় করে নিয়েছি। হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত , আমাদের প্রিয়
নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন - সমর্থ্য থাকা সত্বেও যে ব্যক্তি কুরবানী
না করে সে যেন একজায়ের আশেপাশেও না আসে। কুরবানী শুধু নিজের পক্ষ থেকে দেয়া
ওয়াজিব , স্ত্রী - পুত্র বা অন্য কারো পক্ষ থেকে নয়। কুরবানী ওয়াজিব ছিল না
এমন ব্যক্তি যদি কোরবানির নিয়তের পশু ক্রয় করে তবে সে কোরবানি করা ওয়াজিব
হবে। কুরবানীর গোশত অমুসলিমকে দেওয়া জায়েজ আছে তবে কোরবানির গোশত কাউকে
পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া যাবে না। কুরবানীর পশুর চামড়া অভাবগ্রস্তকে দিতে হবে
অথবা তা বিক্রি করে সেই মূল্য গরীব দুঃখীকে দান করতে হবে। কুরবানীর প্রাণীর এই
চামড়া গুলো সেই সকল ব্যক্তিকে দেওয়া জায়েজ যাদের যাকাত দেয়া যায়। তবে কিছু
কিছু ক্ষেত্রে কুরবানীর পশুর চামড়া নিজের কাজে ব্যবহার করা যায় যেমন
- জায়নামাজ বানানো।
কুরবানির সাওয়াব
সমর্থ্যবান ব্যক্তিদের ওপরে যেহেতু কোরবানি করা ওয়াজিব সুতরাং সমর্থ্যবান
ব্যক্তিরা যদি আল্লাহ খুশি করার জন্য পশু কুরবানী করে তাহলে অশেষ সওয়াবের
অধিকারী হতে পারে। এবার আমরা আলোচনা করব কুরবানীর সওয়াব সম্পর্কে। আপনি যদি
কোরবানির সওয়াব সম্পর্কে না জানেন তাহলে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি এখনই জেনে
নিন। চলুন তাহলে আলোচনার মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক কুরবানীর সওয়াব সম্পর্কে।
হাদিসে আছে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন-কুরবানী তোমাদের পিতা হযরত
ইব্রাহিম (আ) এর সুন্নত। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন - কুরবানীর পশুর প্রত্যেক অসমের জন্য একটি করে
সোয়াব পাওয়া যায় (তিরমিজি ,ইবনে মাজাহ)।
রাসুলুল্লাহ (সা) আরো বলেছেন -কুরবানীর দিনে , কুরবানী ব্যতীত আল্লাহতালা নিকটে আর কোন ইবাদত নেই। কোরবানির দিনে এটাই সকল ইবাদতের মধ্যে উত্তম এবং কোরবানির সময় রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়।
কুরবানীর প্রয়োজনীয় মাসায়ালা
এবার আপনাদের জানাবো কয়েকটি কুরবানীর প্রয়োজনীয় মাসায়ালা সম্পর্ক।
আপনার যদি জানা না থাকে তাহলে এই প্রয়োজনীয় মাসায়ালা গুলো জেনে নিতে
পারেন, কুরবানীর প্রয়োজনীয় মাসায়াল গুলো সঠিকভাবে কোরবানি করতে আপনার সাহায্য
করবে বলে আশা করছি।
কোরবানির জন্তু কানা , অতি দুর্বল , খোঁড়া , নির্ধারিত বয়সের চেয়ে কম
অথবা কোন অঙ্গ নেই এই ধরনের প্রাণী কুরবানীর জন্য জায়েজ নয়। তবে শিং খারাপ বা
শিং ভাঙ্গা বিশিষ্ট পশু কুরবানীতে জায়েজ আছে।
ছাগল , ভেড়া , দুম্বা কুরবানী করতে হলে একজনের নামে কুরবানী করতে হয়। গরু ,
উট , মহিষ সাত জনের নামে কুরবানী করা যায়।
কোরবানির পশু কেনার সময় প্রত্যেক ভাগিকে সমান অর্থ প্রদান করতে হবে কেউ যদি
সামান্য পরিমাণ অর্থ কম দেয় তাহলে কোরবানি জায়েজ হবে না। কোরবানির জন্তু একা
ক্রয় করে পরে অংশীদার গ্রহণ করা যায়, কিন্তু এরূপ করা মাখরুহ। প্রথম থেকে
সবাই মিলে একসঙ্গে ক্রয় করার খরচ বহন করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ মাথার চুল লম্বা করার উপায়
কুরবানীর পশু যে যবেহ করে তার পারিশ্রমিক গোস্ত বা চামড়ার মূল্য থেকে শোধ করা
জায়েজ নয়।নিসান পরিমাণ সম্পদের মালিকের জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব। কোরবানির
নিয়ত জানা থাকলে নিজ হাতে কুরবানী করা উত্তম। কোরবানির পশু জবাই করার
সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করতে হবে। এবং ঈদুল আযহার নামাজ পড়ার আগে
কুরবানী করা জায়েজ নেই।
কুরবানীর পশুর চামড়া নিজের প্রয়োজনে , মসজিদ নির্মাণাধীন কাজে অথবা অন্যান্য
যে কোন নেক কাজে ব্যবহার করা জায়েজ নেই। কোরবানির পশুর চামড়া অথবা কোরবানির
পশুর চামড়ার মূল্য গরীবদেরকে দান করে দিতে হবে।
মন্তব্য, এই পোষ্টের মাধ্যমে কোরবানি সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য এবং কুরবানির
দোয়া সম্পর্কে আশা করছি ভালোভাবে জেনে নিয়েছে। কোরবানি করার জন্য কুরবানির
দোয়া জানা অত্যাবশ্য। ঈদুল আযহার কুরবানী দেওয়ার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন
পশু কোরবানি যাতে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্য হয় অন্য কোন
কারণেই কুরবানী করলে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url