ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ - ফ্যাটি লিভার কি
এই কারণে, ফ্যাটি লিভার কে অবহেলা না করে আসুন শুরু থেকেই এর সম্পর্কে সচেতন হয়
এবং আমাদের লিভার কে সুস্থ রাখার চেষ্টা করি। কারণ লিভার আমাদের এমন একটি গ্রন্থি
যেটি আক্রান্ত হলে আমাদের শরীরের প্রায় সকল সিস্টেম নড়বড়ে হয়ে যায়। আজকে এই
পোস্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানাবো ফ্যাটি লিভার সম্পর্কে। আশা করছি এই পোস্টটি
সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়লে ফ্যাটি লিভার রোগীদের জন্য কি করনীয় এবং কি
বর্জনীয় সে সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা আপনারা পেয়ে যাবেন। পোস্টটি ভালোভাবে
পড়ুন এবং জেনে ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ এবং ফ্যাটি লিভার হলে
করণীয় হলে
আলোচনার বিষয়বস্তঃফ্যাটি লিভার কি - ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ -ফ্যাটি লিভার হলে করণীয়।
- লিভার কি
- ফ্যাটি লিভার কি
- ফ্যাটি লিভারের ধরন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার কি
- নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার কি
- ফ্যাটি লিভারের কারণ
- ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকিতে আছেন যারা
- ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ
- ফ্যাটি লিভার হলে করণীয়
- ফ্যাটি লিভার রোগ নির্ণয়ের জন্য কোন ধরনের ক্লিনিক্যাল টেস্ট করা হয়
- কোন কোন খাদ্য লিভারের ফ্যাট কমায়
লিভার কি
লিভার বা যকৃতকে বলা হয় শরীরের "পাওয়ার হাউস"। এই লিভার হল আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ একটি বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি ।বিভিন্ন সময় খাদ্যের মধ্যে দিয়ে অথবা অন্যান্য উপায়ে আমাদের শরীরে ধরনের রোগ জীবাণু আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। এই রোগ জীবাণু গুলোর মাধ্যমে শরীরে বিভিন্ন ধরনের অসুখ অথবা ক্ষতি হয়। লিভার শেষ অব জীবাণুকে ধ্বংস করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো লিভার, এই লিভার যদি ঠিক না থাকে তাহলে শরীরের অভ্যন্তরের কোন কাজই স্বাভাবিকভাবে হয় না।
আরো পড়ুনঃ কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়
লিভার ভালো না থাকলে শরীরের পরিপাক প্রক্রিয়া সচল থাকে না। পরিপাক সচল না থাকার কারণে আমাদের যেহেতু খাদ্য ঠিকমতন হজম হয় না এই হজম না হওয়া থেকে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতার সৃষ্টি হতে থাকে। আমরা প্রতিদিন যেসব খাদ্য গ্রহণ করি সে সকল খাদ্য থেকে চর্বি বা ফ্যাট লিভার সংগ্রহ করে রাখে। এবং প্রয়োজনের সময় সেই ফ্যাট শরীরের কাজে লাগে এবং শরীর সেখান থেকে শক্তি পায়। কিন্তু লিভারে মজুর থাকা এই ফ্যাটের পরিমাণ যখন অতিরিক্ত হয়ে যায় তখন সেটিকে রোগ হিসেবে ধরা হয়।
ফ্যাটি লিভার কি
আমাদের প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের লিভারে প্রায় ৩-৪ পাউন্ড চর্বি সব সময় জমা থাকে। কিন্তু কোন কারনে আমাদের শরীরের অভ্যন্তরের গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি লিভার বা যকৃতে যখন এ চর্বির পরিমাণ ৩-৪ ফাউন্ডের বেশি হয়ে যায় তখন সেটিকে স্বাভাবিক না বলে একটি অসুখ হিসেবে ধরা হয়। লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমা হয়ে যে লোকটি সৃষ্টি হয় সেটিকেই সাধারণত ফ্যাটি লিভার ডিজিজ বলা হয়।১০% শতাংশের বেশি চর্বি লিভারে জমলে সেটিকে ফ্যাটি লিভার হিসেবে ধরা হয়। কয়েক বছর আগেও বিশ্বের ফ্যাটি লিভারের রোগের সংখ্যা মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন ছিল। কিন্তু এখন বর্তমানে ৩৫-৪০ শতাংশ মানুষের মধ্যে এই ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দেখা যায়। শুধু প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নয় শিশুদের ক্ষেত্রেও প্রায় ১৫% এর অধিক শিশুর এই ফ্যাটি লিভার ডিজিজ হচ্ছে।
ফ্যাটি লিভারের ধরন
যুক্তরাজ্যের একটি স্বাস্থ্য সংস্থা (NHS) এন এর দেয়া এক বিবৃতি থেকে জানা যায়,
যাদের শরীর মোটা এবং যারা স্থূলতায় ভোগেন বা যাদের শরীরের ওজন স্বাভাবিকের
তুলনায় বেশি থাকে তাদের মধ্যে ফ্যাটি লিভার হওয়ার সম্ভাবনা বা ঝুঁকি বেশি থাকে।
লিভার বা যুকৃতের চর্বি জমার এই রোগটি সাধারণত দুই ধরনের হয়
- অ্যালকোহলিক ফ্যাটিলিভার
- নন অ্যালকোহল ফ্যাটি লিভার
অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার কি
প্রধানত অ্যালকোহল কিংবা বা মদ জাতীয় খাবার সেবনের ফলে, অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের সৃষ্টি হয়। আমাদের শরীরের জন্য যে কতটা ক্ষতিকর সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু ক্ষতি নয় মারাত্মক ক্ষতি করে। বেশি বেশি অ্যালকোহল জাতীয় খাবার গ্রহণ করা ফ্যাটি লিভারের অন্যতম প্রধান একটি কারণ। তাহলে বুঝতেই পারছেন, এলকোহল বা মদ গ্রহণের ফলে লিভার বা যকৃতে ফ্যাট জমলে সেটিকে অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার বলে।
নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার
অ্যালকোহল বা মদ জাতীয় খাবার না খেলেও, লিভারে ফ্যাট জমে। অ্যালকোহল সেবন না করেও লিভারের ফ্যাট জমার অন্যতম কারণগুলো হলো বেশি তৈলাক্ত খাবার খাওয়া , ফাস্টফুড জাতীয় খাবার খাওয়া , নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম না করা এবং নিয়মতান্ত্রিক ভাবে জীবন যাপন না করা। এইসব কারণগুলোর জন্য যখন লিভারের চর্বি বেড়ে গিয়ে ডিজিজে পরিণত হয় তখন সেটাকে নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার বলে। সাধারণত শহর এলাকার মানুষদের মধ্যে এই ফ্যাটি লিভারের সংখ্যা বেশি দেখা যাই।
ফ্যাটি লিভারের কারণ
বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীরের একটি বড় অর্গান বা গ্রন্থি যেটাকে নাকি শরীরের পাওয়ার হাউস বলা হয়ে থাকে, সেটা ফ্যাটি লিভার নামক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। নিচে ফ্যাটি লিভারের সম্ভাব্য কিছু কারণ তুলে ধরা হলো,
- অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা মদ পান এর কারণে
- কিন্তু তৈলাক্ত খাবার খেলে বা বাইরের খাবার এবং ফাস্টফুট জাতীয় খাবার খেলে
- শরীর অতিরিক্ত মোটা হলে
- অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করলে
- অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে
- ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের এর রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
- বিভিন্ন কারণে অতিরিক্ত ওষুধ গ্রহণ করলে অনেক সময় ফ্যাটি লিভার হয়ে থাকে
- বংশগত কারণেও ফ্যাটি লিভার হয়
- একেবারে শারীরিক পরিশ্রম না করলে
ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকিতে যারা আছেন
কয়েক বছর আগেও ফ্যাটি লিভারের রোগীর সংখ্যা অল্প কিছু বা হাতে গোনা কয়েকজন ছিল।
কিন্তু এখন যত দিন যাচ্ছে ততই যেন এই রোগের রোগীর সংখ্যা ততই বাড়ছে। শিশু
থেকে বুড়ো কেউ যেন এই রোগের বাইরে নেই। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমাদের
সকলেরই উচিত লিভার সম্পর্কে সচেতন হওয়া। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক কাদের এই
ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি রয়েছে বা ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকিতে যারা আছেন,
- উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের রোগীরা
- যাদের শরীর অতিরিক্ত মোটা এবং স্থূলতায় ভোগেন যারা
- যাদের শরীরে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল আছে
- যারা অতিরিক্ত মদ বা অ্যালকোহল সেবন করেন
- যারা নিয়মিত শরীর চর্চা বা হাঁটাচলা করেন না
- যারা অনন্ত্রিত জীবন যাপন করেন
- যারা অতিরিক্ত টেনশান এবং ট্রেস নিয়ে থাকেন
- অতিরিক্ত রাত জাগার ফলেও ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে
- শাক-সবজি ফলমূল এবং পুষ্টিকর খাবার যারা খায় না।
ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ
শুরুতে ফ্যাটি লিভার রোগের কোন লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে না। এই কারণে এই রোগটিকে নীরব ঘাতক বলা হয়। লিভারের চর্বির মাত্রা যখন দিনে দিনে বাড়তে থাকে তখন আস্তে আস্তে বিভিন্ন উপসর্গ বা লক্ষণ প্রকাশ হতে শুরু করে। আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক কি কি লক্ষণ প্রকাশ পেতে দেখলে আপনাকে ফ্যাটি লিভার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং দ্রুত ডাক্তারি পরামর্শ নিতে হবে। ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ গুলো যদি জানা না থাকে তাহলে পোস্টের এ অংশটি পড়ুন এবং ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ গুলো জেনে নিন নিচে ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ বা উপসর্গগুলো তুলে ধরা হলো,
- লিভারের ফ্যাট জমলে খাদ্যে অরুচি আছে।
- প্রায় প্রায় বমি বমি ভাব হয়
- মাঝে মাঝে শরীর হঠাৎ করে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে
- হাত - পায়ের , নখ এবং চোখ হলুদ হওয়া ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ
- গ্যাসের সমস্যা বা এসিডিটি বেড়ে যায়
- লিভারে ফ্যাটের মাত্রা বেশি হলে অনেক ক্ষেত্রে পেট ফুলে যায়
- হাত পা ফুলে যায়
- শরীরের ডান পাশে যেখানে লিভার অবস্থিত সেই স্থানে এবং পিঠের দিকে ব্যথা বা যন্ত্রণা অনুভব হতে শুরু করে
- শরীরের বিলুরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়
- পেট সবসময় ভারী লাগে
- লিভার শক্ত হয়ে যায়
ফ্যাটি লিভার রোগ নির্ণয় করার জন্য কোন ধরনের ক্লিনিকাল টেস্ট করা হয়
কোন মানুষ বা কোন রোগী ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত কিনা সেটি বোঝার জন্য, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রোগীর পেটে লিভারের অংশে হাত ধারনা করে নিতে পারেন বা বুঝতে পারেন, যে রোগীটি ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত কিনা। কারণ, যারা ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হয় তাদের লিভার স্বাভাবিকের তুলনায় শক্ত হয়ে যায়। তারপরেও পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য ফ্যাটি লিভারের রোগীদের ক্লিনিক্যাল টেস্ট হিসেবে-আল্ট্রাসনোগ্রাফি,ফাইব্রোস্ক্যান , এম আর আই ইত্যাদি টেস্ট করানো হয়।
পরিশেষে আপনাদেরকে আমি ব্যক্তিগতভাবে এই বিষয়টিতে সচেতন করব যে, কিছু নিয়ম
তান্ত্রিক চলাফেরা এবং কিছু খাদ্যাভাস এর মাধ্যমে আপনারা ফ্যাটি লিভার রোগ থেকে
রক্ষা পেতে পারেন এবং ফ্যাটি লিভার হলেও এই নিয়ম কানুন গুলো মেনে চললে সুস্থ
জীবন যাপন করতে পারেন। প্রথম অবস্থায় ফ্যাটি লিভার কোন মারাত্মক রোগের পর্যায়ে
না পড়লেও, আমাদের অসচেতনতার কারণে ধীরে ধীরে যখন লিভারে আরও ফ্যাট জমতে থাকে
সেটি একসময় ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। এবং একসময় আমাদেরকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে
দেয়। এই কারণে সময় থাকতে ফ্যাটি লিভার সম্পর্কে সচেতন হন এবং আপনার পরিবার এবং
আশেপাশের মানুষকে সচেতন করুন। কারণ একটি কথাই আছে-"প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ
উত্তম"।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url