লিভার সিরোসিসের লক্ষণ - লিভার সিরোসিস রোগীর খাবার
সূচিপত্রঃলিভার সিরোসিসের লক্ষণ - লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায় - লিভার সিরোসিস রোগীর খাবার।
- লিভার সিরোসিস
- লিভার সিরোসিস কেন হয়
- লিভার সিরোসিসের লক্ষণ
- লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায়
- লিভার সিরোসিস কি ভাল হয়
- লিভার সিরোসিস রোগীর খাবার
- লিভার সিরোসিস হলে কি হয়
লিভার সিরোসিস
বর্তমানে লিভার রিলেটেড রোগগুলো মানুষের কাছে অতি পরিচিত রোগ হিসেবে পরিণত হয়েছে। প্রায় মানুষেরই শোনা যায় লিভার রিলেটেড অসুখ আছে তার মধ্যে লিভার সিরোসিস রোগীর সংখ্যাও কম নয়। তাই এই রোগ সম্পর্কে ভালোভাবে জামাতে আছে আলোচনা করব লিভার সিরোসিস সম্পর্কে। লিভার সিরোসিস নামটি শুনে হয়তো বুঝতে পারছেন এটি একটি লিভার রিলেটেড আসুখ। লিভারের যেকোনো অসুখের যদি দীর্ঘদিন কোন সঠিক চিকিৎসা না হয় ধীরে ধীরে সেই অসুখটি লিভার পরিণত হয়। অত্যন্ত জটিল এবং মারাত্মক এই রোগটি। লিভার সিরোসিস হলে লিভারের কার্যক্রম ক্ষমতা বন্ধ হয়ে যায়, এবং লিভার নষ্ট হয়ে যায়। লিভার যেহেতু শরীরের একটি বড় বড় অর্গান সেক্ষেত্রে লিভার সিরোসিস হলে শরীরের অন্যান্য প্রক্রিয়াগুলো ক্ষতিগ্রস্ত এবং প্রভাবিত হতে থাকবে। এবং লিভার সিরোসিস নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এটি ডেকে আনে মৃত্যু। আশা করছি লিভার সিরোসিস সম্পর্কে আপনাদেরকে ধারণা দিতে পেরেছি।
লিভার সিরোসিস কেন হয়
আমাদের সকলেরই লিভার সিলসির সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত এবং জেনে নেওয়া উচিত লিভার সিরোসিস কেন হয়। চলুন তাহলে আমরা এবার জেনে মেনে লিভার সিরিসিস কেন হয়। লিভার সিরোসিস হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি কারণ হলো লিভারের যেকোনো ওষুধের সঠিক চিকিৎসা না করা। লিভারের ছোট বড় যেকোন রোগ হলে সেটা সম্পর্কে যদি শুরু থেকে সচেত যায় তাহলে সঠিক চিকিৎসার অভাবে এই ছোট রোগটি আস্তে আস্তে বড় হতে শুরু করে এবং এক পর্যায়ে দেখা দেয় লিভার সিরোসিস। লিভার শেষে সাধারণ যে কারণগুলো দেখা যায় সেগুলো হল -
- হেপাটাইটিস বি ,সি আক্রান্ত হলে এর থেকে সিরোসিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
- ফ্যাটি লিভার আরেকটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য কারণ লিভার সিরোসিসের
লিভার যদি হেপাটাইটিস বি বা সিএ আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন সঠিক চিকিৎসা না পাই তখন এখান থেকে ধীরে ধীরে প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং একসময় লিভার সিরোসিস হয় যার ফলে যকৃত বা লিভার অকার্যকর হয়ে পড়ে। ফ্যাটি লিভার নামটি সাথে আমরা এখন অনেকেই পরিচিত কারণ অধিকাংশ মানুষেরই শোনা যায় ফ্যাটি লিভারের সমস্যা। এই ফ্যাটি লিভার থেকেও লিভার সিরোসিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । কারণ ফ্যাটি লিভার রোগটি হচ্ছে , লিভারে ফ্যাট জমা। সঠিক সময়ে যদি লিভারের এই ফ্যাট দূর করা না যায় তাহলে , লিভারের ফ্যাটের মাত্রা বেড়ে গিয়ে যকৃত শক্ত হতে শুরু করে এবং লিভারের পোস্টগুলো নষ্ট হতে শুরু করে। এরপর ফ্যাটি লিভার থেকে ধীরে ধীরে লিভার ফাইব্রোসিস হয় এবং লিভার ফাইব্রোসিস এর পরের ধাপে হয় লিভার সিরোসিস। ফ্যাটি লিভার আবার দুইভাবে হতে পারে যথা-
- অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার
- নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার
এই দুই ধরনের ফ্যাটি লিভার থেকেই লিভার সিরোসিস হতে পারে অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার থেকে হওয়া সিরোসিস কে বলা হয় অ্যালকোহলিক লিভার সিরোসিস। যা নাকি দীর্ঘদিন ধরে অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় বা খাবার সেবনের মাধ্যমে হয়ে থাকে। অন্যদিকে নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের কারনে যে সিরোসিস হয় কাকে বলা হয় নন অ্যালকোহলিক লিভার সিরোসিস। সাধারণত এই সিরোসিস বিভিন্ন চর্বি জাতীয় খাবার বা ফ্যাট জাতীয় খাবার বেশি খাওয়ার ফলে এবং প্রয়োজনীয় শরীরচর্চার অভাবে লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমে গিয়ে হয়।
আরো পড়ুনঃ পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা
এছাড়াও লিভার সিরোসিস বংশগত কারণে হয়ে থাকবে অথবা বেশ কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে লিভারের সমস্যা তৈরি হয় এবং এখান থেকে ধীরে ধীরে শরীর লিভার সিরোসিসের দিকে এগিয়ে যাই । এই কারণে যারা প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খায় তাদের লিভার সিরোসিসের ব্যাপারে সাবধান এবং সচেতন থাকা উচিত।আশা করছি বুঝতে পেরেছেন লিভার সিরোসিস কেন হয় এবং কি কারনে লিভার সিরোসিস হয়।
লিভার সিরোসিসের লক্ষণ
লিভারের এই ধরনের বড় বড় অসুখ বা সংক্রামন গুলোকে বলা হয় নীরব ঘাতক। কারণ এরা নিরবে শরীরের অভ্যন্তরে বাসা বাঁধে শুরুতে এই ধরনের অসুখগুলোর ক্ষেত্রে সেরকম কোন লক্ষণ প্রকাশ না পেলেও ধীরে ধীরে যখন রোগের তীব্রতা বাড়তে থাকে তখন এই রোগ গুলোর লক্ষণ পায় , আর লক্ষণ পাওয়া শুরু হওয়ার পরেও আমরা যদি অবহেলা করি তাহলে অচিরেই মৃত্যু ডেকে আনতে পারি এই রোগ। তাই চলুন লিভার সিরসির সম্পর্কে সচেতন হই এবং জেনে লিভার সিরোসিসের লক্ষণ গুলো। আপনারা যারা জানেন না তারা অবশ্যই লিভার সিরোসিসের লক্ষণ গুলো জেনে নিন এবং এই লক্ষণগুলো আপনার শরীরে যদি প্রকাশ পেয়ে থাকে তাহলে অচিরেই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।লিভার সিরোসিসের লক্ষন গুলো হলো,
- দির্ঘদিন জন্ডিসে ভোগা
- ত্বকসহ সারা শরীর হলুদ হয়ে যাওয়া
- বিলিরুবিন বেড়ে যাওয়া
- সবসময় শরীর ক্লান্ত , অস্থির ও দূর্বল লাগা
- হাত পা ফুলে যাওয়া
- লিভার শক্ত হওয়া
- পেটে পানি জমা
- পেট ফুলে যাওয়া
- মেমরি কমে যাওয়া
- বিনা কারনে শরীরে রক্ত জমা হয়ে কালশিটে পড়া
- খাদ্য ভালো ভাবে হজম না হওয়া এবং পেতে গ্যাস হওয়া
- শরীরের অ্যাাল্বুমিন কমে যাওয়ার ফলে হাত পা জ্বলা
- ওজন কমে যাওয়া
- অ্যালার্জি বা চুলকানি বেড়ে যাওয়া
- ছেলেদের অন্ডকোষ শুকিয়ে যাওয়া ও মেয়েদের মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া
- খাবারে অরুচি দেখা দেয়া
- কোথাও কেটে গেলে প্রচুর রক্তপাত হওয়া
লিভার সিরোসিস বা লিভারের জটিল রোগ গুলোর শুরুতে কোন উপসর্গ প্রকাশ পায় না , রোগ যখন অনেকটা এগিয়ে যায় এবং জটিল আকার ধারণ করে তখন আস্তে আস্তে লিভার সিরোসিসে লক্ষণ প্রকাশ থেকে থাকে। তাই কোন ভাবে বোঝে এই ধরনের লক্ষণগুলো আপনার শরীরের সাথে মিলে যায় তাহলে আর দেরি না করে গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজি বিশেষজ্ঞ দেখানো উচিত।
লিভার সিরোসিস রোগীর খাবার
লিভার সিরোসিস রোগীর খাবার তালিকা প্রস্তুত করার সময় অত্যন্ত সচেতন থাকতে হয়। কারণ , লিভার এর সমস্যা আমাদের হযম প্রক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটায়,তাই লিভার সিরোসিস রোগীর খাবার তালিকায় যদি সহযে হযম হয় এমন খাবার না থাকে তাহলে পেটে দেখা দিবে এ্যসিডিটি এবং এর ফলে বেড়ে যাবে লিভারের সমস্যা খাবার না হলে। তাই আমাদের কে জানতে হবে লিভার সিরোসিস রোগীর খাবার গুলো সম্পর্কে। লিভার সিরোসিস রোগীর খাবার হতে হবে সহজপাচ্য অর্থাৎ সহজে হজম হয় ও লিভার ভালো রাখে এই ধরনের খাবার, চলুন এবার তাহলে লিভার সিরোসিস রোগীর খাবার এর নাম গুলো জেনে নেওয়া যায়,
- সালাদ জাতীয় খাবার
- গ্রিন টি
- লেবু
- আদা
- আপেল সিডার ভিনেগার
- আপেল
- বাদাম
- ডিম
- দুধ ও দুগ্ধ যাত খাবার
- ছাড়া চর্বি ছাড়া গরু খাসির মাংস
- ছোট মাছ
- লাউ
- পেপের / ঝিঙ্গার ঝোল টাইপের তরকারি
- আঁশ যুক্ত শাকসবজি ও ফল
এই খাবারগুলো খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে হবে এবং চা কফি , সকল
প্রকার প্রসেসফুড , তেল মশলাযুক্ত খাবার , ভাজাপোড়া , ফাস্টফুড খাবার
গুলো সম্পূর্ণরূপে পরিহার করতে হবে। এছাড়াও চিনি ও লবণ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে
হবে। শরীরের জন্য চিনি ও লবণ দুটি উপাদানই অত্যন্ত মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে
দাঁড়াতে পারে। লিভার সিরোসিসের রোগীদের খাবার তালিকা প্রস্তুতের সময় অবশ্যই
একজন ভালো ডায়েটেশিয়ান এর পরামর্শ নেয়া উচিত।
লিভার সিরোসিস হলে কি হয়
আপনি কি জানেন লিভার হলে কি হয়। যদি না জেনে থাকেন তাহলে এ বিষয়ে কি আপনাদের
জন্য এখনই জানিয়ে দিচ্ছি। লিভার সিরোসিস হলে হলে শরীরে বেশ কিছু
সমস্যা বা জটিলতা দেখা দেয়। লিভার সিরোসিস হলে শরীরের যে সকল সমস্যাগুলো দেখা
দেয় সেগুলো হলো,
- কাজে এনার্জি না পাওয়া , অর্থাৎ শরীর সবসময় দুর্বল লাগে
- শরীরের বিলিরুবিনে মাত্রা বেড়ে যায়
- শরীরের কালশিটে পড়া এবং এলার্জি বা চুলকানি বেড়ে যায়
- খাদ্য অরুচি এবং পেতে হজমের সমস্যা দেখা দেওয়া।
- হাত ,পা ,পেট ফুলে যাওয়া ও পানি জমা
- শরীরে অ্যালুমিনের মাত্রা কমে যাওয়া
- কোথাও কেটে গেলে সহজে রক্ত না বন্ধ হওয়া
- যৌন শক্তি কমে যাওয়া।
মন্তব্য, উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে এতক্ষণে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন যে লিভার
সিরোসিস হলে এর শেষ পরিণতি কি হতে পারে। এই কারণে লিভারের যে কোন সমস্যা কে
অবহেলা না করে ট্রিটমেন্ট করানো উচিত এবং লিভারের কোন সমস্যাকেই ক্রনিক লিভার
ডিজিজ এ পরিণত হতে দেওয়া যাবে না। লিভার সম্পর্কে সচেতন করার জন্য এই পোস্টটে
আপনাদেরকে জানানো হয়েছে লিভার সিরোসিসের লক্ষণ , লিভার সিরোসিস থেকে
মুক্তির উপায় ও লিভার সিরোসিস রোগীর খাবার সহ আরো যাবতীয় বিষয়। লিভার
সম্পর্কিত এই তথ্যগুলো ভালোভাবে অবজারভেশনে রাখুন এবং সিরোসিস নামক প্রাণনাশক রোগ
থেকে নিজেকে রক্ষা করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url