ইভটিজিং কাকে বলে - যৌন হয়রানির কারণ - যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে করণীয়
বর্তমানে আধুনিক জীবন ব্যবস্থা যখন বিজ্ঞানের সভ্যতায় চরম উন্নতি লাভ করছে তখনও আমাদের সমাজে আজকের নারীদের অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি নারীদেরকে এখনো প্রতি পদে পদে বিভিন্নভাবে ইভটিজিং এর শিকার হতে হয়। আর সমাজ দেশ ও জাতির উন্নয়নের বিভিন্ন কাজে যেহেতু নারীদেরকে বিভিন্ন সময় ইভটিজিং বা যৌন হয়রানির শিকার হতে হয় এই জন্য আমাদের জাতীয় উন্নয়ন অনেকটাই বিঘ্নিত হয়ে থাকে । আর তাই আজকে আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে আলোচনা করব ইভটিজিং কাকে বলে যৌন হয়রানির কারণ এবং যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে করণীয় বিষয় সম্পর্কে।
যৌন হয়রানের বিরুদ্ধে সমাজের সকল স্তরের সকল শ্রেণীর মানুষকে সচেতন করে তুলতে
হবে। যদি এই কাজটি আমাদের পক্ষে করা সম্ভব না হয় তাহলে কোনভাবেই আমাদের সমাজ
থেকে ইভটিজিং এর মতন ঘৃণিত অপরাধ দূর করা সম্ভব না আর এই জঘন্য অপরাধটি বন্ধ করা
সম্ভব না হলে আমাদের দেশ ও দশের উন্নতি ও সম্ভব নয় । তাই আসুন আজকে এই
সচেতনতামূলক পোস্টটির মাধ্যমে আমরা জেনে নিই ইভটিজিং কাকে বলে যৌন হয়রানি কারণ
এবং যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে করণীয় বিষয়গুলো
আলোচনায় যা যা থাকছে ঃ ইভটিজিং কাকে বলে - যৌন হয়রানির কারণ - যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে করণীয়
- ইভটিজিং কাকে বলে
- যৌন হয়রানির কারণ
- যৌন হয়রানের ফলে মেয়েদের সামাজিক অবস্থা
- যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে আমাদের দেশের আইন
- যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে করণীয়
ইভটিজিং কাকে বলে
পোস্টের আলোচনার শুরুতেই ট্রেনে নেব ইভটিজিং কাকে বলে, বর্তমানে বিশ্বে
ইভটিজিং শব্দ কি অত্যন্ত ঘৃণিত এবং বিব্রতকর। তাই জেনে নেই চলুন ইভটিজিং
কাকে বলে। সাধারণ এবং সহজভাবে বলতে গেলে বলতে হয় যে কোন ভাবে
নারীদের উত্তক্ত করাকে ইভটিজিং বলে, এটি নারীদের উপরে এক
ধরনের অত্যাচার। পথে-ঘাটে কর্মক্ষেত্রে বা অন্য যেকোন স্থানে পুরুষ কর্তৃক
নারীর প্রতি অশালীন কথাবার্তা , অঙ্গভঙ্গ ইভটিজিং হিসেবে পরিচিত। নারীদের
হয়রানি করা বা উত্ত্যক্ত করার ইভটিজিং নামটি কে যৌন হয়রানিও বলা যেতে পারে।
সমাজ মনোবিজ্ঞানীরা ইভটিজিং কারীকে সন্ত্রাসীদের সাথে তুলনা করেছেন । মানবাধিকার
কমিশনের মতে এটি একটি পোস্টকারী অপরাধ এবং জাতিসংঘের সব সনদেই নারীর প্রতি
উত্তক্মুলক আচরণকে যৌন হয়রানি বা যৌন নির্যাতন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং বলা
হয়েছে এর ফলে নারীদের বিকাশ ,উন্নয়ন , চলাফেরা সব ক্ষেত্রে স্বাধীনতা বাধা
গ্রস্থ হয়। আশা করি ইভটিজিং কাকে বলে বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।
যৌন হয়রানির কারণ
উপরের অংশটুকু পড়ার পরে নিশ্চয়ই ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন ইভটিজিং কাকে বলে এবার
আমাদের জানতে হবে যৌন হয়রানির কারণ সম্পর্ক , যখন আমরা যৌন হয় তা নিয়ে
কারণগুলো উদঘাটন করতে পারবে বা যৌন হয়রানের কারণগুলো জানবো তখনই এটি
প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। এ কারণে চলুন জেনে নেওয়া যাক , যৌন হয়রানির
কারণগুলো
যৌন হয়রানির কারণ গুলো নির্দিষ্ট করে বলা অসম্ভব কারণ এর পেছনে বহু কারণ রয়েছে।
তবে যৌন হয়রানির পেছনে যতই কারণ থাকুক না কেন, এর প্রধান কারণ হলো নারী চোখে
পুরুষের আচরণ শিশুদের প্রতি সমাজের বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি। এছাড়াও যৌন হয়রানি
পেছনে রয়েছে বর্তমান যুগে শিশুদের ত্রুটিপূর্ণ মানসিক বিকাশ এবং অপসংস্কৃতির
আগ্রাসন ও শিশুদের বেপরোয়াভাবে বেড়ে ওঠা। যৌন হয়রান এর পেছনে আরো যে সকল
কারণ রয়েছে সেগুলো হলো পরিবারের নারী সামান্য অপরাধী নির্যাতিত ও নিপীড়িত হওয়া
, পুরুষদের নৈতিক অবক্ষয় ও নারীদের প্রতি ত্রুটিপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি।
তাছাড়াও বয়সন্ধিকাল হলো মানুষের অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং সিনসিটি একটি সময়। এই সময় গুলোতে স্বাভাবিক ভাবেই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বেশি থাকে। বর্তমান যুগে বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রিক ডিভাইস গুলো তরুণ তরুণীদের অশ্লীল দৃশ্য দেখানোর মাধ্যমে চারিত্রিক অবক্ষয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। নারীদের প্রতি আকর্ষণ , নৈতিকতার অভাব এবং অবদমিত ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ প্রকাশ থেকে বর্তমান সমাজের যৌন হয় নারী চরম আকার ধারণ করছে। অপসংস্কৃতি ও বিকৃত যৌনতা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পুরুষ নারী প্রতি অশালীন আচরণ করছে ।
আরো পড়ুনঃ ছোলা খাওয়ার উপকারিতা
এছাড়া উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে মেয়েদের ছবি তুলে বা ভিডিও চিত্রধারণ করে তা
খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে যা - সাইবার ক্রাইম নামে পরিচিত।
রাস্তাঘাটি অথবা শিক্ষা ক্ষেত্রে এবং কর্মক্ষেত্রে নারীরা যেমন যৌন হয়রানি শিকার
হচ্ছে ঠিক এরকম সাইবার ক্রাইম এর মাধ্যমে নারীদের বিভিন্নভাবে হয়রানির করানো
হয়। যৌন হয়রানির কারণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে , women and gender ওরা বলেছেন
- নাটক সিনেমায় দেখানো সহিংস ও উত্তপ্ত মুলক আচরণ বর্তমানে তরুণদের অনেক
বেশি প্রভাবিত করছে এবং তারা বাস্তব জীবনে নাটক সিনেমায় দেখা বিভিন্ন ধরনের
পন্থা অবলম্বন করতে গিয়ে নারীদের উত্তপ্ত কর এছাড়াও যৌন হয়রানি পেছনে যে কারণ
রয়েছে সেই কারণটি হল সামাজিক মূল্যবোধ ও পারিবারিক শাসনের অভাব । আশা করছি যৌন
হয়রানির কারণ গুলো বুঝতে পেরেছেন।
যৌন হয়রানের ফলে মেয়েদের সামাজিক অবস্থা
চলুন এবার আমরা জেনে নিই যৌন হয়রানের ফলে মেয়েদের সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে। অনেক আগে থেকেই আমাদের সমাজে নারী উত্তপ্ত করণ এর বিভিন্ন ঘটনা ঘটে থাকলেও বর্তমানে এই ধরনের ঘটনা ব্যাপক আকারে দেখা দিয়েছে । এখন মেয়েরা রাস্তা , স্কুল ,কলেজ , কর্মক্ষেত্র কোন জায়গাতেই নিরাপদ নয় এমন নিজ এলাকা বা নিজ বাড়ির আশেপাশেও এরা বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে । মেয়েরা যৌন হয়রানির শিকার হলেই পরিবার এবং আশেপাশের লোকজন মেয়েদেরকেই দোষারোপ করে এবং বলতে থাকে ' অন্যদের এসব সমস্যার না হলে তোমাদের কেন হয় '।
পরিবার এবং আপনজনদের কাছে থেকে এই ধরনের কথা মেয়েদের মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়
এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে ফেলে যা দেশে এবং জাতির উন্নতিতে একটি বড় বাধা
হয়ে দাঁড়ায় । মেয়েরা যেহেতু যৌন হয়রানি শিকার হওয়ার পরে এই বিষয়ে কারো
সাথে কথা বলতে গেলে উল্টো তারায় অপরাধী হয় এই কারণে যারা প্রকৃত অপরাধী তারা
ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় যার ফলে বারবার এই অপরাধগুলো সংগঠিত করার সুযোগ পাই ।
বর্তমান সমাজের যৌন হয়রানির কারণে মেয়েদের আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে
।
যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে আমাদের দেশের আইন
যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে আমাদের দেশের প্রচলিত আইন সম্পর্কে এবার জেনে নেওয়া যাক। বর্তমানে ইভটিজিং হিসেবে পরিচিত যৌন হয়রানি হলো একটি ফৌজদারি অপরাধ তাই ফৌজদারি আইনে এর বিচার হওয়া উচিত। তবে সমাজের নতুন যেসব সমস্যা দেখা যায় , সনাতনী আইনবিজ্ঞানে সেগুলো ঠিক সেভাবে গ্রহণ করা হয়নি হলে আমাদের দেশের প্রচলিত আইনে এর বিচার একটু সমস্যার সমকুল। নারী প্রতি সহিংসতার বিষয়গুলো শুধু ইভটিজিং হিসেবে দেখা উচিত নয় কারণ এটি একটি অপরাধ মূলক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন লন্ডনে অরাজকতা চলছিল তখন ব্রিটিশ সরকার এটি বন্ধের জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন ।
আরো পড়ুনঃ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়
বর্তমানে ভারত এবং পাকিস্তানের আইনে যৌন হয়রানির জন্য সাত বছরের কারাদণ্ড সাথে
জরিমানা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রচলন রয়েছে । আমাদের দেশের প্রচলিত আইনে যৌন
হয়রানি বিরুদ্ধে 111 ধারা অনুযায়ী এর বিচার করার বিধান চালু হয়েছে এবং যৌন
হয়রানির বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত এক বছরের কারাদণ্ড দেয়ার বিধান করেছেন । যৌন
হয়রানির বিরুদ্ধে এই আইনটি আরো কঠোর হওয়া উচিত কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে
প্রচলিত আইন টি ও সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে না ফলে অপরাধ কি না কমে ক্রমাগত
বেড়েই চলেছে।
যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে করণীয়
যৌন হয়রানি যেহেতু একটি সন্ত্রাসমূলক কার্যক্রম এই জন্য আমাদের উচিত অতি দ্রুত
এটি বন্ধ করার চেষ্টা করা । আর যৌন হয়রানি বন্ধের জন্য অবশ্যই আমাদের কিছু
পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে তাই , যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে
এবার আমরা আলোচনা করব। চলুন তাহলে আলোচনার মাধ্যমে জেনে নেয়া যাক গৌরনও হয়
নানির বিরুদ্ধে করণীয় বিষয় সম্পর্কে অথবা যৌন হয়রানি বন্ধ করতে কি কি পদক্ষেপ
গ্রহণ করা উচিত। যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে করণীয় বিষয়ে হিসেবে আমাদেরকে বেশ কিছু
পাঠ্যক্রম কঠোরভাবে পালন করতে হবে এবং মেনে চলতে হবে যেমন-
- ছোটবেলা থেকেই সন্তানদেরকে সঠিকভাবে বড় করে তুলতে হবে তাদের নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি নারীদের অবহেলা না করার প্রতিও সচেতন করতে হবে এবং নারীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখাতে হবে।
- যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে গণমাধ্যমগুলোর ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে এই কারণে যৌন হয়নানি বন্ধ করতে যৌন হয়রানি মূলক বিজ্ঞাপন তথ্যচিত্র নাটক সিনেমা ইত্যাদি সম্প্রচার বন্ধ করতে হবে ।
- মেয়েদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে হবে তারা যেন নিজেরাই বখাটেদের প্রতিরোধ করতে পারে সেই জন্য তাদের জন্য আত্মরক্ষমূলক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে পরিবার থেকেও তাদের মানসিক সহযোগিতা দিতে হবে ।
- ছেলেমেয়েদের শিক্ষা সংস্কৃতি ও ক্রীড়া বিষয়ক অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত করতে হবে এতে তাদের মানবিক গুণাবলী ও সামাজিকতা শিক্ষা লাভ করবে । এবং একে অপরের উপরে সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হবে ।
- এবং সর্বশেষে , ইভটিজিং কারী বা বখাটেতের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং এর প্রতিফলন ঘটাতে হবে , যাতে একজনের শাস্তি দেখে পরের জন এই ধরনের অপরাধ করার সাহস না পাই । সর্বোপরি বলা চলে সমাজের মধ্যে সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে সচেতনতাই বৃদ্ধি হলে যৌন হয়রানি প্রতিরোধের উপায় ।
মন্তব্য , এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা আলোচনা করেছি ইভটিজিং কাকে বলে , যৌন হয়রানির কারণ এবং যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে করণীয় । আপনি যদি যৌন হয়রানের বিরুদ্ধে করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার পরিবার এবং শিশু সন্তানদের সঠিক শিক্ষায় মানুষ করুন এবং ছোট থেকে এদের নারীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব সৃষ্টি করানোর চেষ্টা করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url