হজ্জের ফজিলত - হজ্জের এহরাম বাধার পর যেসব কাজ হারাম
ইসলামের পাঁচটি রোপনের মধ্যে একটি রোকন হল হজ্জ। হজ পালন করা অত্যন্ত সোয়াবের কাজ। আজকে আমরা আলোচনা করব পবিত্র হজ্জ সম্পর্কে। পবিত্র হজ্জের ফজিলত এতই বেশি যে এই প্রসঙ্গে এক হাদিস থেকে জানতে পারা যায়, নবীজি বলেন - যদি কোন ব্যক্তি হজ করার পরে কোনরকম গুনাহের কাজে দীপ্ত না হয় তাহলে সে মাতৃগর্ভ হতে জন্ম নেয়া শিশুর মতন নিষ্পাপ হয়ে যায়। আজকে আমরা জানব হজ্জের ফজিলত এবং হজ্জের এহরাম বাধার পর যেসব কাজ হারাম সে বিষয়ে।
সূচিপত্রঃ হজ্জের ফজিলত - হজ্জের এহরাম বাধার পর যেসব কাজ হারাম
- হজ্জ কি
- হজ্জের ফজিলত
- হজ্জের প্রকারভেদ
- হজ্জের ফরজ
- হজ্জের ওয়াজিব
- হজ্জের সুন্নত
- হজ্জের এহরাম বাধার পর যেসব কাজ হারাম
- স্ত্রী লোকদের হজ করতে যাওয়ার নিয়ম
হজ্জ কি
হজ্জের ফজিলত জানার আগে আমাদের আগে জানতে হবে হজ্জ কি। আপনাদেরকে আজকে সহজভাবে জানাবো হজ্জ কি বা কাকে বলে। জিলহজ মাসের ৯ তারিখে এহরাম বাধা অবস্থায় কাবা শরীফ জিয়ারত ও তাওয়াফ করা , আরাফার ময়দানে উপস্থিত হওয়া এবং ছাপা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝখানে দৌড়ানোর এই অনুষ্ঠানগুলোকে সম্পন্ন করাকে হজ বলা হয়। শাওয়াল ও জিলকদ মাসর ০২ মাস এবং জিলহজ মাসের প্রথম ১০ তারিখ পর্যন্ত হজ করার সময় । হজ হলো ইসলামের চতুর্থ রোকন। হজ পালনের মাধ্যমে ঈমান পরিপূর্ণ হয়, অশেষ সওয়াব লাভ করা যায় এবং হজ করার মাধ্যমে গুনাহ মাফ করানোর সুযোগ পাওয়া যায়। সামর্থ্যবান ব্যক্তি হজ না করলে এর জন্য মহাপাপ হয় এবং হজ্জকে অস্বীকার করলে কাফের হতে হয়।
হজ্জের ফজিলত
ইসলামের চারটি স্তম্ভের মধ্যে হজ্জ হল একটি স্তম্ভ। মুসলমানদের জন্য হজ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আজকে আমরা আলোচনা করব হজ্জের ফজিলত সম্পর্কে। আপনি যদি হজ্জের ফজিলত সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতটির ফজিলত সম্পর্কে অবশ্যই জেনে নিন। কারণ প্রত্যেক সামর্থ্যবান নর-নারীর প্রতি জীবনে একবার হজ পালন করা ফরজ। চলুন তাহলে এবার আমরা হজ্জের ফজিলত গুলো জেনে নিয়।
হাদিস শরীফে নবীজি বলেছেন - তোমরা মক্কায় গিয়ে হজ পালন কর , পানি যেমন
ময়লাকে ধৌত করে হজ তেমনি পাপকে ধৌত করে দেয়। আল্লাহ পাক বাইতুল্লাহ শরীফ
কে এতই মর্যাদা দিয়েছেন যে , কেউ যদি এখানে এসে এক টাকা দান করে তাহলে লক্ষ
টাকার সওয়াব পাই। এবং এই পবিত্র স্থানে এসে কেউ যদি একটি রোজা করে তাহলে
লক্ষ দিন রোজা রাখার সওয়াব পাবে।
আরো পড়ুনঃ
কুরবানীর দোয়া ও ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ত
হাদিস শরীফ থেকে আরও জানতে পারা যায় যে, প্রিয় নবী (সা) বলেছেন
- আরাফাত দিনে আল্লাহতালা ফেরেশতাদের ডেকে বলেন যে হে
মালাইকা্ কা তোমরা দেখো আমার বান্দা গন বহু দূর দেশ থেকে কষ্ট করে এসে
আরাফার ময়দানের ধুলো মাটির সাথে মিলিত হয়েছে । তোমরা সাক্ষী থাকো আমি তাদেরকে
ক্ষমা করে দিলাম।এই কথা শুনে শয়তান নিজের হাতে তার কপাল চাপড়াতে থাকে এবং শত শত
আফসোস করতে থাকে ।
হাদীস শরীফ থেকে আরও জানতে পারা যায় যে নবীজি বলেছেন যে ব্যক্তি হজ পালন করে এবং মক্কা নগরীতে উপস্থিত হয়ে বাইতুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করে , সাফা মারওয়া পাহাড় সাঈ করে, মাথার চুল মুন্ডন করে , সেই ব্যক্তির গুনা থেকে এমনভাবে নিষ্পাপ হয়ে যায় যেন কেবলমাত্র মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছে।পবিত্র হজ্জ পালন এমন একটি ইবাদত যার মাধ্যমে শারীরিক , মানসিক এবং আর্থিক তিন প্রকারে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা যায় । আল্লাহর ইবাদত করার উদ্দেশ্যে বা হজ পালন করার উদ্দেশ্যে থেকে যাতায়া থাকা খাওয়া ইত্যাদি বাবুর টাকা পয়সা খরচ করতে হয় , সেটিও ইবাদতের মধ্যেই গণ্য হয়। হজ পালন করার সময় শারীরিক ও মানসিক অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়।
বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক কষ্ট স্বীকার করে বাইতুল্লাহ শরীফ সংলগ্ন বিভিন্ন
নির্দেশনা বলি , মসজিদে নববী , এবং ঐতিহাসিক স্থানাবলী যেমন - মিনা ,
মুজদালেফা , আরাফাতের নির্দেশনা বলি , মাকামে ইব্রাহিম, জমজম ও দেখার পরে
করার পরে মহান আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি আরো বেশি গভীর বিশ্বাস
এবং দৃঢ় আস্থা জন্মায়।
হজ্জের প্রকারভেদ
এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক হজের প্রকারভেদ সম্পর্কে । হজ কয় প্রকার এবং কি কি এ
বিষয়ে আপনি যদি সঠিকভাবে না জানেন তাহলে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হজের
প্রকারভেদ সম্পর্কে অবশ্যই জেনে নিন। চলুন তাহলে নিচে আলোচনার মাধ্যমে জেনে
নেওয়া যাক হজের প্রকারভেদ অর্থাৎ হজ কত প্রকার ও কি কি সম্পর্কে। হজ প্রধানত তিন
প্রকার বা বলা যায় তিন প্রকারে হজ্জ আদায় করা যায়। যথা ,
- ফরজ হজ
- ওয়াজিব হজ
- নফল হজ
ফরজ হজঃ যাদের মধ্যে হজ খরচ হওয়ার শর্তগুলো দেখা যায় তাদের জন্য জীবনে একবার
হলেও হজ্ব আদায় করা ফরজ। মনে রাখতে হবে একবার হজ আদায় করলেই তার উপরে অর্জিত
খরচ কাজটি শেষ হয়ে যায় । নামাজের মতন হজ বারবার আদায় করা ফরজ নয়। ফরজ হজ তিন
প্রকারের হয়ে থাকে, যথা -ইফরাদ হজ , তামাত্তু হজ ,ক্বিরান হজ
- ইফরাদ হজঃ গ্রাম বেধে শুধু হজের নিয়ত করে হজ আদায় করাকে ইফরাদ হজ বলে।
- তামাত্তু হজ ঃ একই সফরত অবস্থায় প্রথমে ইমরান বেধে ওমরা আদায় করা পরে আবার একরাম বেধে হজ আদায় করাকে তামাত্তু হজ বলে
- ক্বিরান হজঃ একই ইহরামে ওমরা ও হজ আদায় করাকে ক্বিরান হজ বলে।
ওয়াজিব হজঃ যদি কেউ কোন ব্যাপারে মানত করে থাকে যে হজ আদায় করবে তবে তার জন্য হজ্জ আদায় করা ওয়াজিব , এটাকে ওয়াজিব হজ বলা হয়।
নফল হজঃ উপরে বর্ণিত শর্ত সমূহ না পাওয়া গেলেও নিজের ইচ্ছায় যে হজ করা হয় সেটাকে নকল হজ বলা হয়।
হজ্জের ফরজ
এতক্ষন আমরা হজের প্রকারভেদ সম্পর্কে জানলাম, এবার আমরা হজের ফরজ সম্পর্কে জেনে নেব। আপনার না জানা থাকতে হজের ফরজগুলো সম্পর্কে এখনই জেনে নিন। হজ পালনের ফরজ কাজ গুলো হলো ,
এহরাম বাধাঃ সঠিক সময়েই নির্দিষ্ট স্থান হতে হজের নিয়তে নিজের উপরে বেশ কিছু
বৈধ বিষয়কে হারাম করে নেওয়া কে এহরাম বলা হয়।
তাওয়াফে জিয়ারতঃ ১০ ,১১ ,১২ জিলহজ তারিখে পবিত্র কাবাঘর প্রদক্ষিণ করার
নামই তাওয়াফের জিয়ারত ।
আরাফার ময়দানেঃ ৯ জিলহজ যোহরের পর থেকে আরাফার ময়দানে অবস্থান করা।
হজ্জের ওয়াজিব
পবিত্র হজ পালনের সময় বেশ কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো করা ওয়াজিব , এবার আমরা হজ্জের সেই ওয়াজিব কাজ গুলো জেনে নিব। চলুন এবার নিচে হজ্জের ওয়াজিব কাজগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।ইমাম আবু হানিফের মতানুসারে হজের ওয়াজিব ৫টি । যেমন -
- মারওয়া পাহাড়ে মাঝখানে দৌড়ানো
- মুজদালিফায় অবস্থান করা
- শয়তানকে লক্ষ্য করে কংকর বা পাথর নিক্ষেপ করা
- এহরাম ভঙ্গ করার জন্য মাথা মন্ডল বা চুল কমানো
- বিদায়ী তাওয়াফ করা
হজ্জের সুন্নত
কয়েকটি কাজ রয়েছে যেগুলো হজ পালনের সময় করা সুন্নত । এবার আমরা হজ্জের সুন্নত
কাজগুলো সম্পর্কে জেনে নেব। নিচে হজ্জের সুন্নত কাজগুলো এক এক করে তুলে ধরা
হলো।
- পবিত্র কাবা শরীফে পৌঁছানোর সাথে সাথে তাওয়াফ করা
- তওয়াফ অবস্থায় সতর আবৃত করা
- মিনা হতে ফেরার সময় মহাচ্ছাব নামক স্থানে কিছু সময় অবস্থান করা
- সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝখানে সাতবার প্রদক্ষিণ করা
- শয়তানকে উদ্দেশ্য করে নির্দিষ্ট সংখ্যক অংকন নিক্ষেপ করেন
- আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করার পূর্বে গোসল করা
- জিলহজ সূর্যোদয়ের পূর্বে মিনা থেকে আরাফার ময়দানের দিকে রওনা হওয়া
হজ্জের এহরাম বাধার পর যেসব কাজ হারাম
এবার জেনে নিন হজ্জের এহরাম বাধার পর যেসব কাজ করা হারাম , আপনাদের সুবিধার জন্য হজ্জের এহরাম বাধার পর যেসব কাজ হারাম সেগুলো নিচে একে একে তালিকা করে তুলে ধরা হলো।হজ্জের এহরাম বাধার পর যেসব কাজ হারাম সেগুলো হলো,
- তেল অথবা কোন প্রকার সুগন্ধি দ্রব্য ব্যবহার করা
- সহবাস করা
- দাড়ি চুল নখ কাটা
- মুখ ও চেহারা ঢেকে রাখা
- সাবান অথবা সাবান জাতীয় দ্রব্য দ্বারা দাঁড়ি ও মাথা ধৌত করা
- সেলাই করা কাপড় পরিধান করা
- পাগড়ি , টুপি বা মোজা পরিধান করা
আশা করছি বুঝতে পেরেছেন হজ্জের এহরাম বাধার পর যেসব কাজ হারাম সে বিষয় গুলো। ওপরে বর্ণিত এই কাজগুলো যদি কেউ হজের এহরাম বাধার পরেও করে তাহলে তাকে কাফফারা স্বরপ সদকা করতে হবে।
স্ত্রী লোকদের হজ করতে যাওয়ার নিয়ম
স্ত্রী লোকদের ক্ষেত্রে হজ করতে যাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে। স্ত্রী লোকেরা ইচ্ছা
করলেই একা একা অথবা যার তার সাথে হজ করতে যেতে পারবেনা। এই কারণে সকলকে জানতে হবে
স্ত্রী লোকদের হজ করতে যাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।চলুন স্ত্রী লোকদের হজ করতে
যাওয়ার নিয়ম নিয়ে ইসলাম কি বলে জেনে নেওয়া যাক।
আরো পড়ুনঃ ইসলামে মেয়েদের চুল কাটার নিয়ম
স্ত্রী লোকদের হজ করতে গেলে তাদের সাথে অবশ্যই স্বামী , ছেলে অথবা যেকোন মাহরাম
পুরুষ সাথে থাকতে হবে। স্ত্রী লোক একা একা বা অন্য যে কারো সাথে ইচ্ছা করলে হজ
করতে পারবে না । এবং স্ত্রী লোক যদি কোন মহারাম পুরুষকে হজ করার জন্য সাথে নিয়ে
যায় তবে তাহলে তার খরচ পার্টিও গ্রহণ করতে হবে। কোন স্ত্রী লোক যদি এই দায়িত্ব
পালন করতে অথবা কোন মহররম পুরুষ না পায় তাহলে হজ ফরজ হওয়ার পরেও সারা জীবনেও
তার উপরে ফরজ হজ না করার গুনাহ হবে।
মন্তব্য, উপরিউক্ত পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে এতক্ষণে নিশ্চয়ই হজ সম্পর্কিত
বিভিন্ন তথ্যগুলো ভালোভাবে জেনে নিয়েছেন, আপনি যদি সামর্থ্যবান ব্যক্তি হন তবে
অবশ্যই গাফিলতি না করে হজের মৌসুমে আপনার উপরে অর্পিত এই ফরজ ইবাদত কি করে
ফেলা উচিত । হজ যেহেতু ইসলামের পাঁচটি রোকনের মধ্যে অন্যতম একটি রোকন সে ক্ষেত্রে
অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে হজ পালনের তৌফিক দান করুন
(আমিন) ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url