এইডস রোগের লক্ষণ - এইডস রোগের কারণ - এইডস প্রতিরোধে করণীয়

 
আধুনিক যুগের আলো ঝলমলে সভ্যতার জন্য এক অমোচনীয় কালিমা হিসাবে দেখা দিয়েছে ঘাতক ব্যাধি এইডস। বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিত মনে করা হলো এইডস নামক দুরারোগ্য ব্যাধি প্রাদুর্ভাবে মানুষের এ সাফল্য কীর্তি নিত্যন্ত অসার প্রমাণিত হয়েছে । কারণ বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে এইডস ছড়িয়ে পড়লেও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এখনো যথার্থ চিকিৎসা ও প্রতিশেধক আবিষ্কারের ব্যর্থ হয়েছে । তাই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে আপনাদের জানাবো এইডস রোগের লক্ষণ ও এইডস রোগের কারণ এবং এইডস প্রতিরোধে করণীয়।
অনেকে এইডসকে বিশ্ববাসীর জন্য প্রাকৃতিক অভিশাপ রূপে গণ্য করেছে। বিষয়টি অনেকাংশে সত্য বটে। কারণ মানুষের অনিয়ন্ত্রিত ও বিকৃত জীবন আচরণেরই ফসল এই মরণব্যাধি এইডস। তাই এই রোগ সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানার জন্য আজ আমরা আলোচনা করব  এইডস রোগের লক্ষণ , এইডস রোগের কারণ এবং এইডস প্রতিরোধে করণীয় বিষয় সম্পর্কে।

সূচিপত্রঃ এইডস রোগের লক্ষণ - এইডস রোগের কারণ - এইডস প্রতিরোধে করণীয়

এইডস কি

আজ আমরা আলোচনা করবো এইডস নিয়ে এবং আপনাদের জানাবো এইডস কি।চলুন প্রথমেই জেনে নেয়া যাক এইডস কি, এইডস কোন বিশেষ রোগ নয়। বরং শরীরের একটি বিশেষ অবস্থার নাম যাতে মানব শরীরের অনেকগুলো রোগ ও উপসর্গের ক্ষেত্রে পরিণত হয়। এইডস (AIDS) ইংরেজি Acquired Immune Deficiency Syndrome- এর সংক্ষিপ্ত রূপ। ইংরেজি এ কথাগুলোর অর্থ করলে দাঁড়ায় মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অকার্যকারিতার লক্ষণ সমূহের সমষ্টি যা মানুষের দ্বারা অর্জিত। জন্মগতভাবে মানুষ জৈবিক প্রক্রিয়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অধিকারী। এ ক্ষমতা মানুষকে প্রতিকূল পরিবেশ ও রোগের আক্রমণ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শরীরে রক্ষা করে। Human Immune Deficiency Virus(HIV) নামক এক ধরনের মারাত্মক ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার ফলে মানুষের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙ্গে পড়ে। দেখা দেয় নানা প্রকার মারাত্মক উপসর্গ। এ অবস্থাকেই এইডস নামে চিহ্নিত করা হয়।
এইডস- এর আবিষ্কার বিশ শতকের শেষ ভাগ পর্যন্ত এইডস রোগ সম্পর্কে বিশ্ববাসীর কোন ধারণাই ছিল না। সেই সূত্রে এইট একটি নবতল রোগ। ১৯৮৩ সালে সর্বপ্রথম একজন ফরাসি চিকিৎসা বিজ্ঞানী মানবদেহে এ উপস্থিতির HIV- এর আবিষ্কার করেন । ১৯৮৫ সালে একদল আমেরিকান বিজ্ঞানী HIV আছে কিনা তা নির্ণয় করার পদ্ধতি আবিষ্কার করে। মার্কিন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা সম্পূর্ণ নতুন এ রোগের নাম দেন Acquired Immune Deficiency Syndrome বা এইডস। গত শতাব্দীর আশির দশকে আফ্রিকা মহাদেশে এ রোগের প্রথম প্রাদুর্ভাব ঘটে এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ নির্ণয় ও প্রতিকারে ব্যর্থ হওয়ার এ নিয়ে ব্যাপকভাবে গবেষণা শুরু করেন ।

এইডস রোগের কারণ

আজকের এই আধুনিক যুগেও এইডস হলো একটি আতঙ্কের নাম। এই রোগ সম্পর্কে সচেতন না হলে তা ছড়িয়ে পড়তে পারে মহামারি আকারে, তাই সকলের এইডস রোগের কারণ জেনে রাখা উচিত। আজকে আপনাদের এইডস রোগের কারণ গুলো জানাবো। অনেকেরই হয়তো এইডস রোগের কারণ সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই , তাই চলুন আর দেরি না করে এইডস রোগের কারণ গুলো জেনে নেওয়া যাক।
বস্তুত মানুষের অনিয়ন্ত্রিত ও বিকৃত যৌনাচারের ফসল এই এইডস রোগ। প্রথম দিকে গবেষকরা ধারণা করেছিলেন যে আফ্রিকায় নীল বানরের সাথে মানুষের যৌন সংসর্গে লিপ্ত হবার ফলে এইডস তথা HIV ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। পরবর্তীতে অবশ্য এর ধারণার মৌলিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে মানুষের বহুগামিতা, সহকামিতা, পশু মৈথুনসহ নানা প্রকার বিকৃত যৌনাচারের ফলেই যে এই রোগটির সৃষ্টি হয়েছে তা ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মহল একমত । আশা করছি এইডস রোগের কারণ গুলো সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন।

এইডস রোগ যেভাবে ছড়ায়

এইডস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ সুস্থ মানুষের HIV সংক্রামিত মানুষের সাথে যৌন সংসর্গে লিপ্ত হওয়া। সেজন্য যেসব সমাজের অবৈধ যৌনাচার রয়েছে সেসব সমাজে এইডস-এর ঝুঁকি তথা সংক্রমণ বেশি। তাছাড়া এর এইডস রোগীর শরীরের রক্ত গ্রহণ কিংবা এর এইডস রোগীর ব্যবহৃত ইনজেকশনের সিরিঞ্জ সুস্থ দেহে ব্যবহারের ফলে এর সংক্রমণ ঘটে থাকে । HIV আক্রান্ত মায়ের গর্ভের জন্মকারী শিশু জন্মগতভাবে এ রোগ জীবাণুর নিজ দেহে বহন করে এবং নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। 

এইডস রোগের লক্ষণ

দুরারোগ্য ব্যাধি এইডস রোগের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে আপনার সঠিক জ্ঞান আছে ? আপনি যদি এইডস রোগের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে সঠিকভাবে না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার এই বিষয়টি জেনে রাখা উচিত। আপনাদের সচেতনতা জন্য আজকে এইডস রোগের লক্ষণ গুলো সম্পর্কেও সঠিকভাবে জানাবো। তাহলে চলুন আর দেরি না করে এইডস রোগের লক্ষণ গুলো জেনে নেওয়া যাক। দুরারোগ্য ব্যাধি এইডস রোগের লক্ষণ গুলো হলো- 
  • রোগীর শরীরের ওজন ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়া। 
  • দীর্ঘমেয়াদি টানা জ্বর চলতে থাকা। 
  • দীর্ঘদিন ধরে উদরাময় চলতে থাকা। 
  • গলা, বকল ও কুচকির লসিকা গ্রন্থি ফুলে ওঠা। 
  • মুখ, চোখসহ শরিরের বিভিন্ন স্থানে চামড়ার উপরিভাগে চ্যাপ্টা প্রচুর লাল রঙের দাগ পড়া। 
  • বারবার হারপিক জুসটার দ্বারা রোগী সংক্রমিত হয় 
  • মুখ ও গলায় এক ধরনের ঘা হয় যা থেকে ফেনা যুক্ত রস বের হয় 
  • সমগ্র হারপিস সিসপ্লেক্স সংক্রমিত। 
  • সমস্ত দেহের চুলকানি ছড়িয়ে পড়া। 
  • রোগীর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লুপ্ত হওয়া, কোনো ওষুধ কাজে না লাগা।

এইডস এর ভয়াবহতা

এইডস এর ভয়াবহতা সম্পর্কেও আপনাদের জেনে রাখা উচিত।এইডস এর ভয়াবহতা সম্পর্কে জানা থাকলে তবেই বুঝতে পারবেন কত  দ্রুত ছড়াতে পারে।গত শতাব্দীর আশির দশকে এ রোগটির প্রকাশ ঘটার পর দ্রুত সারাবিশ্বে এ রোগটি ছড়িয়ে পড়েছিল। ২০০০ সালি মাত্র ১৫ বছরের ব্যবধানে বিশ্বে এর রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২ কোটি ১৮ লাখ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও জাতিসংঘের এইডস সংস্থা (UN-AIDS) এর হিসেবে ২০০৫ সাল নাগাদ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই কোটিরও বেশি। গড়ে ১০ ভাগেরও অধিক হারে এ রোগের সংক্রমণ ঘটে। আর এর অধিকাংশ সংক্রমিত হচ্ছে আফ্রিকা মহাদেশ ও এশিয়ার গরীব দেশগুলোতে। দক্ষিণ আফ্রিকার জনসংখ্যার শতকরা ২৫ ভাগলক এইডস রোগ তথা HIV ভাইরাস তারা সংক্রামিত। মোজাম্বিক, গোয়েন্দা, বুরুন্ডি, ইথিওপিয়া, তানজানিয়া প্রভৃতি দেশের অবস্থাও একই রকম। এশিয়ার মধ্যে থাইল্যান্ড চীন ভিয়েতনাম ও দ্রুত এইডস রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। এর সংক্রমণের ঝুঁকির দিক দিয়ে বিপদজনক অবস্থার মধ্যে রয়েছে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মায়ানমার। গবেষকদের হিসেব মতে, ভবিষ্যতে বিশ্বের মোট আয়ের সিংহভাগই ব্যয় করতে হবে এর রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসায়।

বাংলাদেশে এইডস রোগ অবস্থা

এবার চলুন জেনে আসা যাক বাংলাদেশে এইডস রোগ অবস্থা । সচেতনতা বৃদ্ধি করতে না পারলে বাংলাদেশে এইডস রোগ অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে কেননা ,সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ২৩৮ জন এইডস রোগের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে বেসরকারি গবেষকদের মতে এইডস রোগের সংখ্যা ২০ হাজারের কম নয়।
যেহেতু আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মায়ানমারে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সেহেতু বাংলাদেশও এর রোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। আমাদের দেশে এইডস রোগীর বাস্তব পরিসংখ্যান পাওয়া সত্যিই দুরূহ। কারণ এ রোগ নির্ণয়ের সুলভ ব্যবস্থা নেই। সামাজিক কারণে এই রোগ আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রকাশ করেন না এমনকি চিকিৎসা নিতে না কেউ যান না । অপরদিকে কর্মসংস্থান ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভৃতি কারণে আমাদের দেশের মানুষ এখন ব্যাপকভাবে পৃথিবী বিভিন্ন দেশের যাতায়াত করছে ফলে এইডস অনুপ্রবেশের ঝুঁকি বাড়ছে।

এইডস প্রতিরোধে করণীয়

এখন পর্যন্ত এইডস এর কার্যকর কোন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে পারেন। প্রতিষেধক হিসেবে টিকা আবিষ্কারের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের গবেষণা পরিচালিত হলেও তাতে এখনো সাফল্য আসেনি। তাই এই রোগ সংক্রমণ থেকে বাচার থেকে প্রতিকার একমাত্র উপায়।আর তাই এইডস প্রতিরোধে করণীয় বিষয় গুলো প্রত্যেকেরই জেনে রাখা উচিত। এইডস  প্রতিরোধ করণীয় বিষয়গুলো নিম্নরুপ_ 
  • যৌনাচারের ক্ষেত্রে সংযম প্রদর্শন ও বিকৃতি মানসিকতাকে এড়িয়ে চলা। 
  • পারিবারিক মূল্যবোধ রক্ষা ও দাম্পত্য জীবনে বিশ্বস্ত থাকা। 
  • যৌন মিলনে কনডম ব্যবহার করা। 
  • অসুস্থতার জন্য রক্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা, রক্ত যথাযথভাবে পরীক্ষার পরই তা গ্রহণ করা । 
  • ইনজেকশনের সিরিঞ্জ একাধিকবার ব্যবহার না করা। 
  • এইডস আক্রান্ত মায়েদের সন্তান গ্রহণ থেকে বিরত থাকা। 
  • জীবনের সর্বক্ষেত্রে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতার চর্চা করা । 
  • এইডস রোগ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার জন্য রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারণা জোরদার করা। 
  • সল্পমূল্যে বা বিনামূল্যে কনডম প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। 
  • রোগ নিম্ন ব্যবস্থা সুলভ ও সহজতর করা। তাছাড়া এইডস রোগীদের সম্পর্কে আমাদের ধারণা পরিবর্তন করা।
মন্তব্য, এইডস রোগ মানব সভ্যতার জন্য এক মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষের অবিমৃষ্য কারিতার জন্যই এ মরণব্যাধি সৃষ্টি হয়েছে। এই মানুষটি তার পরিণতি ভোগ করতে হবে। সামগ্রিক ব্যবস্থা বিবেচনায় বাংলাদেশের অধিবাসীদেরও এ রোগের ব্যাপারে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে । তাই ব্যাপক আকারে রোগটি ছড়িয়ে পড়ার আগে আমাদের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।তাই এইডস রোগের লক্ষণ , এইডস রোগের কারণ -,এইডস প্রতিরোধে করণীয় বিষয় সম্পর্কে আজকেই সকলের সচেতন হওয়া উচিত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url