ঘুমের উপকারিতা - রাতে ঘুম না হলে করনীয়
আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুমের ব্যাপারটিও অপরিহার। কারণ পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং এটি আনতে পারে অকাল মৃত্যু। তাই আজকে আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে আলোচনা করব ঘুমের উপকারিতা এবং রাতে ঘুম না হলে করণীয় কি এই বিষয় সম্পর্কে।
এই পোস্টের মাধ্যমে রাতে ঘুম না হলে করণীয় বিষয়ের পাশাপাশি করতে পারবেন রাতে ঘুম না হওয়া রোগের নাম ,অতিরিক্ত ঘুমানোর অপকারিতা ,কোন ভিটামিনের অভাবে ঘুম কম হয় ,কি খেলে ঘুম কম হয় এবং চা খেলে কি ঘুম কম হয় এই বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত। যারা ঘুম সম্পর্কিত এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো জানতে চান তারা সকলেই এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
সূচিপত্রঃ ঘুমের উপকারিতা - রাতে ঘুম না হলে করনীয়
- ঘুমের উপকারিতা
- রাতে ঘুম না হলে করনীয়
- রাতে ঘুম না হওয়া রোগের নাম
- অতিরিক্ত ঘুমানোর অপকারিতা
- কোন ভিটামিনের অভাবে ঘুম কম হয়
- কি খেলে ঘুম কম হয়
- চা খেলে কি ঘুম কম হয়
ঘুমের উপকারিতা
আমাদের শরীরের জন্য যে ঘুম কতটা প্রয়োজন তা নতুন করে হয়ত আর বলার অপেক্ষা রাখেনা , তারপেও চলুন আরো একবার ভালোভাবে জেনে নেয়া যাক ঘুমের উপকারিতা গুলো।শরীর ভালো রাখার প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে ঘুমের ভূমিকা।আপনারা যারা ঘুমের উপকারিতা গুলো বিস্তারিত জানেন না , তারা অবশ্যই ঘুমের উপকারিতা গুলো বিস্তারিত ভাবে জেনে নিন। ঘুম আমাদের শরীরের যে সকল ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে ,সেগুলো হল
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে ঘুমালে আমাদের
শরীরের হরমোনের মাত্রা ঠিক থাকে। আর শরীরে হরমোনের মাত্রা ঠিক থাকার কারণে রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
ত্বক ও চুল ভালো থাকেঃ ঘুম শুধু শরীরের অভ্যন্তরের ক্রিয়া-কলাপ ঠিক রাখতেই সাহায্য করে না এটি আমাদের স্কিন এবং চুলের যত্নের জন্য অত্যন্ত জরুরী। আর এই কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমালে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা এবং চুলের সমস্যা দূর হয়।
ওজন নিয়ন্ত্রণ করেঃ সঠিক মাত্রায় ঘুমালে এটি আমাদের শরীরের হরমোনাল
ব্যালেন্স ঠিক রাখার পাশাপাশি ডাইজেস্টিক সিস্টেমকে সঠিকভাবে কাজ করতে
সাহায্য করে, তাই সঠিক পরিমাণে ঘুমালে এই ঘুম আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণেও বিশেষ
সাহায্য করে থাকে।
কাজের এনার্জি পাওয়া যায়ঃ প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ছয় থেকে সাত ঘন্টা ঘুমালে শরীরের ক্লান্তি ,স্ট্রেস , মানসিক চাপ কম হয় , এই কারণে সঠিক পরিমাণ ঘুমানোর ফলে কাজের এনার্জি পাওয়া যায় এবং সারাদিন কর্মক্ষম থাকা যায়।
আরো পড়ুনঃ মুখের দূর্গন্ধ দূর করার উপায়
ক্লান্তি দূর হয়ঃআমাদের প্রতিদিনের কর্মব্যস্ত জীবনে ,কাজের চাপে আমরা অনেক সময় ক্লান্ত হয়ে পড়ি তখন মেন্টালি ফ্রেশ হওয়ার জন্য দরকার হয় ঘুমের কারণ , ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে ঘুম।ঘুমের মাধ্যমে আমাদের শরীরের ক্লান্তি দূর হয় এবং আমরা নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করতে পারি।
রাতে ঘুম না হলে করনীয়
শরীরের জন্য প্রতিদিন রাতে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমের দরকার। কিন্তু এমন অনেক মানুষ আছে যাদের রাতে ঠিক মত ঘুম আস্তে চায়না। রাতে ঠিকন ঘুম না হলে সারাদিন শরীর ম্যজ ম্যজ করে এবংঘুম ঘুম ভাব থাকে । এছাড়াও ঘুম কম হলে দেখা যায় শারীরিক নানান ধরনের জটিলতা , জটিল তাই এখন আমরা জানবো রাতে ঘুম না হলে করনীয় বিষয় সম্পর্কে। যারা রাতে ঘুম না হলে করনীয় কি তা জানেন না তারা এ বিষয়টি এখুনি জেনে নিন। রাতে ঘুম না হলে করনীয় বিষয় হিসেবে আপনাকে বেশ কিছু জিনিস খেয়াল রাখতে হবে এগুলো হল ,
- ঘুমের সময় ঠিক রাখা, অর্থাৎ আপনি যেই সময় প্রতিদিন ঘুমোতে যান, সেই সময়েই প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার চেষ্টা করা।
- প্রতিদিন কিছু সময় হাটা চলা করা।
- ঘুমাতে যাওয়ার ১ঘন্টা আর সম্ভব না হলে প্রায় আধা ঘন্টা আগে থেকে বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস জিনিস দূরে রাখা, যেমন: মুঠোফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার বা টিভি।
- ঘুমোতে গিয়ে বা বালিশে শুয়ে কখোনই আজকে কি কি করলেন বা কি কি হলো এবং কালকে কি কি করবেন তা, অর্থাৎ কোনো ধরনের কথা না ভাবা।
- চাইলে আগরবাতি বা রিলেক্সিং গান কম ভলিউমে শোনা, এতে ঘুম আসার কাজ অনেক ভালোভাবে করবে। কিন্তু সেগুলো বিছানা থেকে দূরে রেখে ব্যবহার করতে হবে।
- ঘুমনোর সময় কোনো ধরনের ইলেকট্রনিকস জিনিস, বিশেষ করে মোবাইল ফোন মাথার পাশে বা উপরে না রাখা।
- ঘুমোতে যাওয়ার জায়গায়, অর্থাৎ বিছানা যেন আরামদায়ক বা আপনার ঘুমোনোর উপযুক্ত হয়।
- ঘুমোনোর আগে বা রাতের খাবার খাওয়ার পর কখোনোই চা-কফি না খাওয়া।
- ঘুম যতোই না আসুক, ঘুমের ঔষধ সেবন করে ঘুমানো যাবে না। আর বেশি জরুরি হলে মাত্রা অনুযায়ী ডাক্তারের পরামর্শ অনু্যায়ী ঘুমের ঔষধ সেবন করা।
- দিনে বেশিক্ষন বিছানায় গোড়া-গোড়ি না করা। বেশি ক্লান্ত হলে ২৫-৩০ মিনিট ঘুমানো
- দিনে ৭-৮ ঘন্টার বেশি না ঘুমানো।
- অসময়েও না ঘুমানো।
- দিনে বাড়ির তৈরি খাবার খাওয়া, বাইরের ভেজাল ও জাংক ফুড বেশি না খাওয়া।
রাতে ঘুম না হওয়া রোগের নাম
রাতে ঘুম হয়না এমন মানুষের কথা অনেক শোনা যায়। রাতে ঘুম না হওয়া কোন একটি রোগ , আপনি কি জানেন রাতে ঘুম না হওয়া রোগের নাম কি। বেশিরভাগ মানুষই রাতে ঘুম না হওয়া রোগের নাম জানেন কারণ সাধারণ ভাষায় এই রোগটিকে আমরা অনিদ্রা বলে থাকি। আমরা সাধারণভাবে রাতে ঘুম না আসার রোগটিকে অনিদ্রা বলে থাকলেও মেডিকেল বা ডাক্তারি ভাষায় এই রোগটিকে বলা হয় ইনসোমেনিয়া।
অতিরিক্ত ঘুমানোর অপকারিতা
নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুম যেমন আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য , আবার ঠিক
তেমনি অতিরিক্ত ঘুম শরীরের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মধ্যে নয় ঘন্টার বেশি ঘুমালে তা শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে
দাঁড়াতে পারি এই কারণে আজকে আমরা ঘুমের অপকারিতা সম্পর্কে জানার চেষ্টা
করবো। তাহলে চলুন দেরি না করে অতিরিক্ত ঘুমের অপকারিতা গুলো জেনে নেওয়া যাক।
ঘুমের মাত্রা যদি নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে বেশি হয়ে যায় তাহলে শরীর যেসব
সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে সেগুলো হল ,
- ওজন বৃদ্ধি
- ডায়াবেটি
- হার্টের সমস্যা
- ফ্যাটি লিভারের সমস্যা
- গর্ভধারণের সমস্যা
- মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া
- বিষন্নতা বেড়ে যাওয়া
- মাথাব্যথা
- পিঠে ব্যথা
কোন ভিটামিনের অভাবে ঘুম কম হয়
কোন ভিটামিনের অভাবে ঘুম কম হয় তা যদি আপনাদের জানা না থাকে তাহলে খুব সহজেই আপনি শরীরে এই ভিটামিনের ঘাটতি গুলো পূরণ করতে পারবেন এবং ঘুমের সমস্যা বা অনিদ্রার সমস্যা দূর করতে পারবো। তাই ফোন ভিটামিনের অভাবে ঘুম কম হয় এই বিষয়টি আপনাদের অবশ্যই জেনে রাখা উচিত বিশেষ করে যারা ইনসোমেনিয়া বা অনিদ্রার রোগে আক্রান্ত তাদের।
সকল প্রকার ভিটামিন আমাদের শরীরে জন্য অত্যন্ত জরুরী। ভালোভাবে ঘুম না হওয়ার পেছনে রয়েছে শরীরের চাহিদা অনুযায়ী ভিটামিন ডি ও ভিটামিন বি টুয়েলভ না থাকা।সুতরাং বুঝতেই পারছেন ভিটামিন বি ১২ এবং ভিটামিন বি এর অভাবে অনিদ্রা বা ঘুম কম হওয়ার সমস্যায় পড়তে হয়। তাই যারা অনিদ্রার সমস্যায় ভুগছেন তারা অবশ্যই খাদ্য তালিকা প্রস্তুতের সময় ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন বি টুয়েলভ জাতীয় খাবার গুলো অবশ্যই খাদ্য তালিকায় রাখুন।
কি খেলে ঘুম কম হয়
যাদের অনিদ্রার সমস্যা আছে তারা অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন কি খেলে ঘুম কম হয়।আপনাদের হযতো জানা নেই এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো খেলে আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে এবং ঘুম কম হয়।আজকে আপনাদের জানবো কি খেলে ঘুম কম হয় সে খাবার গুলোর নাম।
কফি ঃ অনেকেরই অভ্যাস থাকে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে অথবা রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পান করা। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানা নেই যে এই কফি আমাদের ক্লান্তি দূর করলেও পাশাপাশি সৃষ্টি করে অনিদ্রার সমস্যা।
গ্রীন টিঃ গ্রীন টি পানের উপকারিতা কথা হয়তো কারো অজানা নেই কিন্তু গ্রিন টি যদি অতিরিক্ত পান করা হয় তাহলে এই পানীয়টি সৃষ্টি করে অনিদ্রা বা ঘুম কম হওয়ার সমস্যা।
অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবারঃ অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার গুলো সহজে হজম হয় না আর
এই জাতীয় খাবার গুলো সহজে না হজম হওয়ার কারণে পেটে গ্যাস বা অ্যাসিটি সমস্যা
তৈরি হয়। তাই বেশিরভাগ সময় দেখা যায় অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার গুলো খেলে
রাতে ঘুমের সমস্যা বা ঘুম কম হওয়ার অসুবিধায় পড়তে হয়
ফাস্টফুডঃ ফাস্টফুড জাতীয় খাবার গুলো আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর, এই জাতীয় খাবার গুলোর মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে চর্বি যা পেটে এসিডিটি তৈরির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অতিরিক্ত পরিমাণে ফাস্টফুড জাতীয় খাবার গুলো খেলেও রাতের ঘুম নষ্ট হয়
আরো পড়ুনঃ পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা
চকলেটঃ চকলেটের কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও ঘুমের আগে চকলেট খাওয়া মোটে উচিত নয় কেননা অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবার গুলো অনেকরা সমস্যা দূর সৃষ্টি করতে সাহায্য করে এবং ডার্ক চকলেটে ক্যাফেইন নামক উপাদান থাকায় এটিও আমাদের ঘুম কম হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
আইসক্রিমঃ আইসক্রিম খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু এবং গরমে স্বস্তিদায়ক হলেও শরীরের পক্ষে একটি কোনভাবেই ভালো নয় । কারণ আইসক্রিমের মধ্যে থাকা উপাদান গুলো আমাদের হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে এবং হজম ভালো না হওয়ার কারণে তৈরি হতে পারে অনিদ্রার সমস্যা।
চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবারঃ অতিরিক্ত চিনি খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর তা আপনারা সকলেই জানেন , চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার গুলো শরীরের ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি রুমের সমস্যা তৈরি করতেও যথেষ্ট সাহায্য করে। এই কারণে যারা সুস্থ আছেন তাদের এবং যারা অনিদ্রায় ভুগছেন উভয় শ্রেণীর মানুষের জন্যই চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার গুলো অল্প পরিমাণে গ্রহণ করাই উচিত।
চা খেলে কি ঘুম কম হয়
প্রায় মানুষের মুখে একটি কথা শুনতে পাওয়া যায় চা খেলে নাকি ঘুম কম হয়, তাই অনেকেই জানতে চান চা খেলে কি ঘুম কম হয় এ কথাটি সত্যি কিনা। এই কারণে আজকে আমরা চা খেলে কি ঘুম কম হয় এই বিষয়টি জানবো।চা নামক পানীয়টি ক্লান্তি দূর করার কাজে যথেষ্ট সাহায্য করো, কেননা চায়ের ভিতরে থাকে কফ্যেইন নামক উপাদান। ক্যফেইন শরীরের ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করলেও এই উপাদানটি স্নায়ুকে উদ্দীপিত করে তোলে আর এই কারণেই চা পানের পরিমাণ যদি বেশি হয় তাহলে চা আমাদের স্বাভাবিক ঘুম আসার প্রক্রিয়াকে নষ্ট করে দিতে পারে আর এই কারণে চা খেলে ঘুম কম হয়।
মন্তব্য ,পোস্টটি পড়ে এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন নির্দিষ্ট বা পরিমিত পরিমাণে ঘুমানো আমাদের শরীরের জন্য কতটা জুরুরি। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ চেষ্টা করুন এবং আপনার যদি ঘুমের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই ঘুম না হলে করণীয় বিষয়গুলো ফলো করুন অথবা ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url