আক্বীকার দোয়া - পশু জবেহ এর নিয়ম
আজকে আপনাদে সাথে শরীয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে আর সেটি হল আকিকা। সন্তান জন্মের পরে পিতামাতার জন্য তার সুন্দর একটি অর্থবোধক নাম রাখা এবং আকিকা দেওয়া এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এবং কর্তব্যের মধ্যে চলে আসে। আর এ কারণে আমাদের জানতে হবে আক্বীকার দোয়া এবং আকিকার পশু জবেহ এর নিয়ম।
আপনি যদি আক্বীকার দোয়া এবং আকিকার পশু জবেহ এর নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে না জেনে থাকেন তাহলে এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আক্বীকার দোয়া এবং পশু জবেহ এর নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নিতে পারেন। কেননা এখন আমরা এখানে আলোচনা করতে চলেছি আক্বীকার দোয়া -এবং পশু জবেহ এর নিয়ম ছাড়াও আকিকার বিবরণ , আক্বীকার গোস্ত বন্টন , যেসব কারণে হালাল পশুর গোশত হারাম হয়ে যায় ইত্যাদি বিষয়ে সম্পর্কে। শরীয়ত মোতাবেক এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জানার জন্য পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
আক্বীক্বার বিবরণ
সন্তান জন্ম হওয়ার পরে নাড়ি কেটে গোসল করিয়ে ডান কানে আযান এবং বাম কানে একামত বলবে। আযান একামত দাঁড়িয়ে কিংবা বসে যে অবস্থায় ইচ্ছা দিতে পারে। তবে কিবলামুখী হবে। তারপর মধু অথবা মিষ্টি পানি মুখে দিবে। সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে আক্বীকা করা উত্তম। সম্ভব না হলে ১৪ দিনে, ২১ দিনে অথবা সুযোগ মত যে কোন সময় করতে পারে। তবে জন্ম তারিখের পূর্বে করলে ভালো হয়। রাসূলুল্লাহ (স.) নিজের আক্বীকা নিজেই করে ছিলেন। সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে মাথা মুড়াবে এবং সম্ভব হলে চুলের পরিমাণ স্বর্ণ বা রৌপ্য দান করবে। ছেলের জন্য দুইটি ও মেয়ের জন্য একটি ছাগল, দুম্বা বা ভেয়ারা দ্বারা আক্বীকা করবে। অর্থাভাবে ছেলের জন্য একটি করলেও হবে। আক্বীকা গরু, মহিষ, উট দ্বারাও দেওয়া যায়। অর্থাৎ কুরবানীর সাথে ছেলের জন্য দুই ভাগ ও মেয়ের জন্য এক ভাগ দিবে। সহীহ রেওয়ায়েত মতে, ছেলের এক ভাগ বা একটি পশুও দেওয়া যায়। আক্বীকার গোশত মা-বাবা আত্মীয়-স্বজন সকলে খেতে পারবে। পশু নিঁখুত হওয়া চাই। চামড়া বিক্রি করে গরিবদেরকে দান করে দিবে। আক্বীকা করা সুন্নত। আক্বীকা করলে আল্লাহ তায়া'লা সকল প্রকার বালা-মুছিবত হতে সন্তানকে রক্ষা করে। বিনা আক্বীকার সন্তান মৃত্যু হলে কিয়ামতের দিন পিতা-মাতার জন্য সুপারিশ করবে না। কুরবানীর জন্য যে শর্তাবলি রয়েছে আক্বীকার পশুর বেলায়ও সেই শর্তই প্রযোজ্য হয়
আক্বীকার দোয়া
সন্তানের পিতা মাতার জন্য আকিকা যেহেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার এই কারণে আকিকার পশু যবেহ করার আগে অবশ্যই আক্বীকার দোয়া ভালোভাবে জেনে নিন। কেননা আক্বীকার দোয়া পাঠ করে পশু জবেহ করা মুস্তাহাব। তাই যারা আক্বীকার দোয়া জানেন না তারা অবশ্যই প্রথমেই আক্বীকার দোয়া জেনে নিন। নিচের অংশে আক্বীকার দোয়া আপনাদের জন্য তুলে ধরা হলো।
আক্বীকার পশু জবেহ করতে নিম্নলিখিত দুআ' পাঠ করে জবেহ করা মুস্তাহাব। উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা হা-যিহী আক্বী-ক্বাতুবনী ফুলা-নিন দামুহা- বিদামিহী, ওয়া লাহমুহা- বিলাহমিহী-, আ'জমুহা- বিআ'জমিহী- ওয়া জালদুহা- বিজালদিহী-, ওয়া শা'রুহা-বিশা'রিহী-, আল্লা-হুম্মায্ আ'লহা- ফিদা-ইল লিইবনী-মিনাননা-রি বিসমিল্লা-হি আল্লা-হু আকবর। [দ্রষ্টব্যঃ ফোলানিন এর স্থলে ছেলের বা মেয়ের যে নাম রেখেছে সে নাম হবে। মেয়ের আক্বীকা হলে প্রত্যেক হি স্থলে হা বলতে হবে; আর অন্যের সন্তান হলে প্রথমে সন্তানের নাম নিয়ে তারপরে সন্তানের পিতার নাম নিতে হবে।
আক্বীকার গোশত বন্টন
আক্বীকার পশুর (গুণ) শর্তসমূহ কুরবানীর পশুর গুণ ও শর্তসমূহের মতই হওয়া একান্ত দরকার, অন্যথায় আক্বীকা দুরস্ত হবে না। যে যে পশু দ্বারা কুরবানী করা যায়, সে সে পশু দ্বারাই আক্বীকা করা যায়। (দোররুল মুখতার) আক্বীকার গোশত এক-তৃতীয়াংশ ফকীর-মিসকীনকে দান করা মুস্তাহাব। আর আক্বীকা পশুর মাথা হাজ্জামকে ও এক রান ধাত্রীকে দেয়া মুস্তাহাব এবং চামড়া দ্বারা কোন ফায়দা হাসিল করা, ছদকা করা মুস্তাহাব।
আরো পড়ুনঃ নারী ও পুরুষের নামাজের পার্থক্য
কুরবানীর গোশত যেমন সকলে খাওয়া দুরস্ত আছে, তেমনি আক্বীকার গোশত মা-বাবা, দাদা-দাদী, নানা-নানী সকলেরই খাওয়া দুরস্ত আছে। যতদিন পরই করুক না কেন, ভুমিষ্ঠ হওয়ার পূর্ব তারিখ হিসেব রেখেই ঐ পূর্ব তারিখেই করা উত্তম। সন্তানের ভরণপোষণ যার উপর কর্তব্য আক্বীকা করা এবং ভালো নাম রাখাই তার উপর কর্তব্য। অন্য রেস্তদার করলেও উত্তীর্ণ হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, "তোমরা সন্তানের নাম রাখতে আমার নামের সাথে মিল রাখো। আল্লাহ তাআ'লা কসম করে বলেছেন, হে মোহাম্মদ! আপনার নামের সাথে যার নামের মিল হবে, কখনও আমি তাকে দোজখে জ্বালাব না।" _______(আল হাদীস)
পশু জবেহের বিরবণ
শরীয়তের নিয়মানুযায়ী কোন ধারালো অস্ত্র দ্বারা হালাল পশু পাখীর রক্ত প্রবাহিত করাকে জবেহ্ বলা হয়। জবেহের নিয়মকানুন জানা না থাকলে, অনেক সময় হালাল পশুপাখিও হারাম হয়ে যায়। জবেহ্ দুই প্রকার: যথা:- (১) এখতেয়ারী (২) এজতেরারী। (১) এখতেয়ারী: জবেহর সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী জবেহ্ করাকে জবেহ্ এখতেয়ারী বলা হয় (২) এজতেয়ারী: আর কোন কারনে সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী জবেহ করা সম্ভব না হলে পশুর শরীরের যে কোন জায়গা হতে রক্ত প্রবাহিত করা, অথবা বিসমিল্লাহ বলে তীর বন্দুক দ্বারা স্বীকার করাকে জবেহ্ এজতেরারী বলে।
জবেহের মাসায়েল
(১) আল্লাহর নামে জবেহ্ করার জন্য এই দুআ' পাঠ করতে হয়ঃ (বিসমিল্লা-হি আল্লা-হু আকবর) অর্থ: "আল্লাহর নামে (জবেহ্ করা) শুরু করছি। আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ"। (২) ওযু অবস্থায় ধারালো ছুরি দিয়ে জবেহ্ করা মুস্তাহাব। (৩) জবেহদাতা ও জবেহে সাহায্যকারী সকলকে "বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার" বলা দরকার। অবশ্য ভুলক্রমে কারো স্মরণ না থাকলেও জবেহ্ দুরস্ত হবে। (৪) প্রাণীকে জবেহ্ করার স্থানে টানা হেচকা করে নিয়ে যাওয়া মাহরুক তাহরীমী। (৫) অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রাণীর মাথা কেটে দু'ভাগ হয়ে গেলে জবেহ্ দুরস্ত হয়ে যাবে এবং মাথা ও ধড় উভয়ই খাওয়া দূরস্ত হবে। (৬) হালাল-হারাম পশু খায় এমন পশুপাখি জবাই করার পূর্বে কমপক্ষে একদিন একরাত কাটিয়ে রেখে হালাল খাদ্য দেয়া উত্তম। (৭) মাছ জবেহ করার শর্ত নেই। (৮) ইচ্ছা করে আল্লাহর নাম ত্যাগ করে জবেহ্ করলে, সে প্রাণী খাওয়া হারাম।
পশু জবেহ এর নিয়ম
জবেহকারী বালেগ, জ্ঞান সম্পন্ন মুসলমান হতে হবে। জবেহে্র পূর্বে দুআ' পাঠ করবে। দুআ' মুখস্ত না থাকলে "বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার" বলে জবেহ করবে। শ্বাসনালী, খাদ্য নালী এবং গলার উভয় পার্শ্বের রগ মোট, এই চারটি রগ কাটতে হবে। তিনটি কাটলেও জবেহ হবে। দুটি কাটলে জবেহ্ হবে না।
জবেহের শর্ত (১) প্রাণীটির গোশত ইত্যাদি খাওয়া হালাল হতে হবে। (২) আল্লাহর নামে জবাই করতে হবে (৩) জবেহ্কারী মুসলিম হতে হবে। (৪) প্রাণীর হলকুমের উপরিভাগের যে একটি বড় কণ্ডা থাকে তার নিম্নভাগ থেকে কণ্ঠনালী শুরু হওয়ার স্থান পর্যন্ত যে জায়গা তার মধ্যে জবেহ্ কার্যক্রম হতে হবে।
যেসব কারণে হালাল পশুর গোশত হারাম হয়ে যায়
বেশ কিছু কারণ রয়েছে যেসব কারণে হালাল পশুর গোশত হারাম হয়ে যায়। এবার আপনাদেরকে জানাবো যেসব কারণে হালাল পশুর গোস্ত হারাম হয়ে যায় সেই কারণে-(১) অমুসলমান জবেহ্ করলে। (২) আল্লাহ ব্যতীত কারো নামে জবেহ্ করলে। (৩) জবেহ্ কালে বলির রীতি গ্রহণ করলে। (৪) যে পশুর উপর বলৎকার অর্থাৎ অপকর্ম করা হয়েছে তাকে জবেহ্ করলে।
যেসব কারণে গোশত মাকরুহ হয়
এমন কিছু কারণ রয়েছে যে কারণগুলোর জন্য গোশত পুরোপুরি হারাম হয় না ঠিকই তবে মাখরুহ হয়ে যায় আপনারা কি সেই সকল কারণগুলো জানেন? অনেকেই হয়তো এ বিষয়ে জানেন না তাই এখন আপনাদের জানাবো যেসব কারণে গোশত মাকরুহ হয়, তাহলে চলুন এবার জেনে নেয়া যাক যেসব কারণে গোশত মাকরুহ হয় -(১) চারটির কম রগ কাটলে। (২) ভুলে বিসমিল্লাহ না বললে। (৩) কোন পশুর সামনে জবেহ্ করলে। (৪) অস্ত্র কম ধারাল হলে। (৫) ইচ্ছা করে কিবলামুখী না হলে। (৬) জবেহ্ কালে জানোয়ারকে অহেতুক কষ্ট দিলে। (৭) জবেহের পর স্থির না হতেই চামড়া খুললে।
আরো পড়ুনঃ যাকাত না দেয়ার শাস্তি
মন্তব্য , এতক্ষণে আপনারা নিশ্চয়ই আক্বীকার দোয়া - পশু জবেহ এর নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জেনে গেছেন। আপনি যদি সামর্থ্যবান হন তাহলে আপনার সন্তান হওয়ার পরে অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব তার একটি ইসলামিক অর্থবোধক নাম রাখুন এবং আকিকার ব্যবস্থা করুন। কেননা আপনার সন্তানের আকিকা দেয়া আপনার উপরে গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব। আল্লাহ পাক সকলকে দায়িত্ব পালনের তৌফিক দান করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url