কোল্ড এলার্জি দূর করার উপায় - নাকের এলার্জি দূর করার প্রাকৃতিক উপায়
যেকোনো ধরনের এলার্জি শরীরের জন্য অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়। বিভিন্ন প্রকারের এলার্জি থাকলেও আজকে আমরা মূলত দুই ধরনের এলার্জি সম্পর্কে আলোচনা করতে একটি হল কোল্ড এলার্জি এবং অপরটি নাকের এলার্জি। আজকে আপনাদের জানাবো কোল্ড এলার্জি দূর করার উপায় এবং নাকের এলার্জি দূর করার প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে কেননা এই দুই এলার্জির কারণে মানুষকে অত্যন্ত কষ্ট পোহাতে হয়।
আপনারা যদি কোল্ড এলার্জি এবং নাকের এলার্জি দূর করার উপায় সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই আজকের এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে করুন, কেননা আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন কোল্ড এলার্জি দূর করার উপায় এবং নাকের এলার্জি দূর করার প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে। আমাদের মধ্যে অনেক মানুষ রয়েছে যারা নাকি ঋতু পরিবর্তন এর সময় বিশেষ করে শীতকালে কোল্ড এলার্জির কারণে এবং নাকের এলার্জির কারণে অত্যন্ত কষ্টদায়ক সময় পার করেন। এ ধরনের রোগী যারা আছেন তাদের কথা চিন্তা করে আজকে আপনাদের জানাবো কোল্ড এলার্জি দূর করার উপায় এবং নাকের এলার্জি দূর করার প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে। তাই আপনি যদি নাকের এলার্জি এবং কোল্ড এলার্জি দূর করার বিষয়ে জানতে চান তাহলে পোস্টটি পড়ে নিন।
কোল্ড এলার্জি কেন হয়
শীতকালে অনেকেরই কোল্ড এলার্জি হয়ে থাকে কিন্তু অনেকেই জানে না কোল্ড এলার্জি কেন হয় বা কোল্ড এলার্জি হওয়ার পেছনে কারণ কি। তাই চলুন এখন কোল্ড এলার্জি কেন হয় এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যাক। আপনারা জানেন আমাদের সবার শরীর একরকম নয় আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যাদের শরীর স্কিন একটু বেশি সেনসিটিভ। কোল্ড এলার্জির পেছনে সেরকম নির্দিষ্ট কোন কারণ পাওয়া না গেলেও যাদের শরীর অত্যন্ত সেনসিটিভ তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি বেশি দেখা যায়। তবে কোল্ড এলার্জির ক্ষেত্রে যেসব সম্ভাব্য কারণগুলো মনে করা হয় সেগুলো হলো , ঠান্ডা বাতাস , ঋতু পরিবর্তন , বায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি। সাধারণত সেনসিটিভ স্কিনগুলো যখন ঠান্ডা সহ্য করতে পারেনা তখনই কোল্ড এলার্জির সমস্যাটি দেখা যায়।
কোল্ড এলার্জির লক্ষণ
কোল্ড এলার্জির লক্ষণ সম্পর্কে কি আপনাদের ধারণা আছে , শরীর যখন কোল্ড এলার্জিতে আক্রান্ত হয় তখন কোল্ড এলার্জির লক্ষণ হিসেবে বেশ কিছু উপসর্গ প্রকাশ পায়, এবার আপনাদের কোল্ড এলার্জির লক্ষণ সম্পর্কে জানাবো। কোল্ড এলার্জির লক্ষণ গুলো হলো ,
- শ্বাসকষ্ট
- বুকে চাপ ধরা
- নাম দিয়ে পানি পড়া
- নাক বন্ধ হয়ে থাকা
- নাকের ভেতরে চুলকানো
- হাঁচি
- কাশি
কোল্ড এলার্জি দূর করার উপায়
আপনাদের মধ্যে অনেকে গিয়ে হয়তো কোল্ড এলার্জির সমস্যা রয়েছে , আপনার কি জানেন কোল্ড এলার্জি দূর করার উপায় সম্পর্কে বা যাদের কোল্ড এলার্জি রয়েছে তাদের কোন ধরনের সতর্কতা গুলো মেনে চলা উচিত। অনেকে হয়তো বিষয়টি জানেন না , তাই আজকে আপনাদের কোল্ড এলার্জি দূর করার উপায় সম্পর্কে জানাবেন কেননা ঋতু পরিবর্তনের সময় অথবা ঠাণ্ডা ভয় এই কোল্ড এলার্জির রোগীদের ভীষণ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। তাই এখন আপনাদের কোল্ড এলার্জি দূর করার উপায় গুলো জানাবো।কোল্ড এলার্জি দূর করার উপায় গুলো হল
ঠান্ডা বাতাস না লাগানোঃ ঠান্ডা লাগলে যেহেতু কোল্ড এলার্জি রোগীদের সমস্যা হয় , এই কারণে যাদের কোল্ড এলার্জি রয়েছে তাদের চেয়ে সব সময় ঠান্ডা বাতাস এড়িয়ে চলতে হবে। যেকোন আবহাওয়াতে এই ধরনের যদি ঠান্ডা বাতাস খায় অথবা সরাসরি ফ্যানের বাতাস ছড়িয়ে লাগাই সেই ক্ষেত্রেও কোল্ড এলার্জির রোগীদের ঠান্ডা লাগা জনিত বিভিন্ন সমস্যা হয়ে থাকে তাই কোল্ড এলার্জির রোগীরা অবশ্যই চেষ্টা করবেন ঠান্ডা বাতাস না লাগানোর এবং সরাসরি গায়ে যাতে বাতাস না লাগে সেই ব্যবস্থা করার
আরো পড়ুনঃ ভাইরাল জ্বর হলে ওষুধ খাওয়া যাবে কিনা
ঠান্ডা খাবার না খাওয়াঃ যাদের কোল্ড এলার্জি সমস্যা রয়েছে তাদের শুধু ঠান্ডা বাতাসই নয় ঠান্ডা খাবার থেকেও দূরে থাকতে হবে। কোল্ড এলার্জির রোগীরা অবশ্যই ফ্রিজে রাখা খাবার , আইসক্রিম , ঠান্ডা পানি , কোলড্রিংস এড়িয়ে চলতে হবে।
গরম কাপড় পরিধান করাঃ গোল্ড এলার্জির রোগীদের প্রধান সমস্যা হলো ঠান্ডা আবহাওয়া ঠান্ডা জাতীয় যে কোন খাবার খেলে ঠান্ডা লাগা জনিত সমস্যা যেমন সর্দি , কাশি ,হাঁচি বেড়ে যাওয়া এ কারণে ঋতু পরিবর্তনের সময় এবং বিশেষ করে শীতকালে সবসময় গরম কাপড় পরিধান করতে হবে যাতে কোনভাবেই শরীরে ঠান্ডা না লাগে।
হালকা গরম পানি এবং খাবার খাওয়াঃ যেহেতু কোল্ড এলার্জির রোগীদের ঠান্ডা খাবারে এবং ফ্রিজে রাখা খাবারের সমস্যা হয় এই কারণে এই জাতীয় রোগীদের খাবার গুলো অবশ্যই হালকা গরম হতে হবে। কোল্ড এলার্জি রোগীরা সবসময় চেষ্টা করবেন হাল্কা গরম পানি খাওয়ার এবং খাবার খাওয়ার সময় সে খাবারটি যেন সম্পূর্ণ ঠান্ডা না হয়ে হালকা গরম থাকে।
নাকের এলার্জির লক্ষণ
এতক্ষণ আমরা কোল্ড এলার্জি সম্পর্কে আলোচনা করেছি আর এবার আমরা জানবো নাকের এলার্জির লক্ষণ সম্পর্কে। কোল্ড এলার্জি এবং নাকের এলার্জি দুটোই খুবই যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা। তাই প্রথমে চলুন নাকের এলার্জির লক্ষণ গুলো জেনে নেওয়া যাক তারপরে আমরা নাকের এলার্জি দূর করার উপায় প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে জানব। নাকের এলার্জির লক্ষণ গুলো হলো ,
- সর্দি লাগা , বা সর্দি ভাব হওয়া
- নাক চুলকানো
- হাঁচি হওয়া
- নাক দিয়ে পানি পড়া
- মাথা ব্যথা
- শ্বাসকষ্ট
- চোখ লাল হওয়া
- নাক বন্ধ হয়ে থাকা
নাকের এলার্জি দূর করার প্রাকৃতিক উপায়
কোল্ড এলার্জির পাশাপাশি নাকের এলার্জিতেও প্রচুর মানুষকে কষ্ট পোহাতে হয়। তাই আজকে আমরা কোল্ড এলার্জি দূর করার উপায় গুলো জানার পাশাপাশি নাকের এলার্জি দূর করার প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কেও আলোচনা করব। আপনাদের মধ্যে যারা আপনাকে এলার্জিতে বিভিন্ন সময় অনেক কষ্ট পেয়ে থাকেন , তারা অবশ্যই আজকের এই নাকের এলার্জি দূর করার প্রাকৃতিক উপায় জেনে রাখুন। নাকের এলার্জি দূর করতে এই টিপসগুলো বিভিন্ন সময় আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। তাই চলুন আর দেরী না করে নাকের এলার্জি দূর করার প্রাকৃতিক উপায় গুলো জেনে নেওয়া যাক।
নিম পাতাঃ নাকের এলার্জি জন্য নিয়মিত নিম পাতা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। এটি নাকের এলার্জি সহ শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ সারাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। নিমপাতা ভালোভাবে ধুয়ে নিয়ে এই পাতা বেটে গোল গোল বড়ির আকারে বানিয়ে রোদে শুকিয়ে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে পারেন এবং এই বইগুলো প্রতিদিন একটি করে খেলে নাকের এলার্জি সহ শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর হবে।
ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়াঃ নাকের অ্যালার্জি বেশি হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো শরীরে হিস্টামিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া। এই হিস্টামিনের এর মাত্রা কমানোর জন্য ভিটামিন সি জাতীয় খাবার এবং ফলগুলো খেতে পারেন কারণ ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গুলো শরীরের অতিরিক্ত হিস্টামিন কমাতে সাহায্য করে। তাই যখন আপনি নাকের এলার্জিতে কষ্ট পেতে থাকবেন তখন ভিটামিন সি জাতীয় ফল এবং খাবারগুলো খাওয়ার চেষ্টা করুন।
দূষিত বায়ু এড় এড়িয়ে চলুনঃ যাক নাকের এলার্জি রোগীদের অবশ্যই দূষিত বায়ু , ধুলোবালি ইত্যাদি এড়িয়ে চলা উচিত কেননা এই সকল জিনিসগুলো আর নাকের এলার্জি রোগীদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই যদি কখনো বাইরে ধুলোবালি স্থানে যেতেই হয় তাহলে তার আগে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।
আপেল সিডার ভিনেগারঃ আপেল সিডার ভিনেগার রয়েছে এন্টিহিস্টামিন জাতীয় বৈশিষ্ট্য। তাই নাকের এলার্জি রোগীরা এই এলার্জিতে কষ্ট পেতে থাকলে সেই সময় ব্যবহার করতে পারেন আপেল সিডার ভিনেগার। প্রতিকূল আবহাওয়াতে নিয়মিত আপেল সিডার ভিনেগার এক চামচ হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে নাকের এলার্জি সমস্যা অনেকটাই কম হয়।
মধুঃ নাকের এলার্জির রোগীদের আরেকটি খুব ভালো ঘরোয়া রেমিডি হলো মধু। মধুর ভেতরে রয়েছে অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল এবং এনডি ইনফ্লামেটরি উপাদান যার নাকের যেকোন সমস্যা দূর করতে এবং নাকের এলার্জি কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। হালকা কুসুম গরম পানিতে অথবা হালকা গরম চায়ের সাথে মধু মিশিয়ে দিনে দুইবার খেলে নাকের এলার্জি থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ হরলিক্স খাওয়ার উপকারিতা
স্পিরুলিনাঃ স্পিরুলিনা নামটি হয়তো আপনারা অনেকেই শুনেছেন ,আসলে এটি হলো নীল ও সবুজ রংয়ের এক ধরনের শৈবাল। এই স্পিরুলিনা হল এন্টি অ্যালার্জি। তাই এই স্পিরুলিনা যদি আপনি খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে পারেন তাহলে এটি আপনার নাকের এলার্জির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে।
গোলমরিচের গুঁড়াঃ গোল মরিচের গুড়া বিশেষ করে কালো গোল মরিচ আপনার নাকের এলার্জি দূর করতে সাহায্য করতে পারে। আর নিয়মিতভাবে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে গোলমরিচের গুড়ার সাথে মধু মিশিয়ে খেলে এটি আপনার নাকের এলার্জি সারাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে তবে আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে , আপনি যখন এই রেমিডিটি এপ্লাই করবেন তখন অবশ্যই দুধ এবং দুধের তৈরি খাবারগুলো কিছুদিন এড়িয়ে চলবে।
ঠান্ডা এবং গরম পরিবেশ এড়িয়ে যাওয়াঃ যাদের নাকের এলার্জি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ঠান্ডা আবহাওয়া এবং গরম পরিবেশ দুটোই ক্ষতিকর আরে কারণে নাকের এলার্জি রোগীদেরকে সতর্ক থাকতে হবে ঠান্ডা আবহাওয়া এবং অতিরিক্ত গরম আবহাওয়া সম্পর্কে কোন অবস্থাতে ঠান্ডা বাতাসে অথবা অতিরিক্ত গরমের ভেতরে থাকা যাবে না।
মন্তব্য , এতক্ষণের আলোচনার মাধ্যমে আপনারা নিশ্চয়ই কোল্ড এলার্জি দূর করার উপায় এবং নাকের এলার্জি দূর করার প্রাকৃতিক উপায় বিস্তারিতভাবে জেনে নিয়েছেন । আশা করি ঋতু পরিবর্তনের সময় অথবা শীতকালে আপনি যদি উপরের এই নিয়মগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করেন তাহলে কোল্ড এলার্জি এবং নাকের এলার্জির কারণে আপনাকে আজ আগের মতন কষ্ট পেতে হবে না। তবে আপনারা চেষ্টা করবেন যেসব কারণগুলোর জন্য নাকের এলার্জি এবং কোল্ড এলার্জি বৃদ্ধি পায় সেইসব কারণগুলো পারোতো পক্ষে এড়িয়ে চলার।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url