অজু হল পাক পবিত্রতা রক্ষার একটি মাধ্যম। ওযু কে নামাজের চাবিও বলা হয়। সব সময়
গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনা তাই
সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত নামাজ থেকে শুরু করে অন্যান্য ইবাদত করার জন্য অথবা পবিত্রতা
রক্ষার জন্য অধিকাংশ সময় আমাদের অজু করতে হয়। অজু যেহেতু পবিত্রতা রক্ষার একটি
গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমে তাই ওযু ভঙ্গের কারণ এবং ওজন ফরজ ও সুন্নত কয়টি এ বিষয়ে
জ্ঞান রাখা মুসলমান হিসেবে আমাদের জন্য খুবই জরুরী।
আজকে আপনাদেরকে এই পোস্টের মাধ্যমে ওযু ভঙ্গের কারণ এবং ওযুর ফরজ ও
সুন্নত কয়টি এই বিষয়গুলো সঠিকভাবে জানানোর পাশাপাশি ওযু কাকে বলে ,ওযুর নিয়ত
,ওযু করার নিয়ম ,ত্যাহিয়াতুল অযুর নামাজের ফজিলত সম্পর্কেও বিস্তারিতভাবে জানাবো। যারা ওযু
সম্পর্কিত এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জানেন না তারা পোস্টটি মনোযোগ সহকারে
পড়ার মাধ্যমে ওযু ভঙ্গের কারণ এবং ওযু ফরজ সুন্নত কয়টি ও কি কি এ বিষয়গুলো
সঠিকভাবে জেনে নিতে পারেন।
সূচিপত্রঃওযু ভঙ্গের কারণ - ওযুর ফরজ ও সুন্নত কয়টি
ইবাদত করার উদ্দেশ্যে শরীয়তের বিধান মতে পাক পানি তারা কতিপয় বিশেষ
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করাকে অজু বলে। নামাজ পড়িতে হলে প্রথমত ওযু প্রয়োজন। অজু
ব্যতীত নামাজ শুদ্ধ হয় না। হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে যে, " অজুর নামাজের চাবি
স্বরূপ "। অন্য হাদিসে বর্ণিত আছে যে "তাহারাত" অর্থ ওযু ও গোসল প্রভৃতি দ্বারা
পাক-ছাপ থাকা। ইহা ইমানের অর্ধাংশ। অর্থাৎ ঈমান দ্বারা মানবগণ যেমন আন্তরিক ও
অভ্যন্তরীণ কুধারণা, কুফর নাপাকি হইতে পবিত্র থাকে, তদ্রুপ "তাহারাত" দাঁড়াও
তাহারা শারীরিক ও বাইরের ময়লা ও কদর্যতা হইতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। ওযুর
মধ্যে কয়েকটি ফরজ, কয়েকটি সুন্নত ও কয়েকটি মুস্তাহাব আছে।
ওযু ভঙ্গের কারণ
মুসলমান হিসেবে ওযু ভঙ্গের কারণ গুলো জেনে রাখা খুবই জরুরি, কেননা ওযু ভঙ্গের
কারণ গুলো জানা না থাকলে অনেক সময় হয়তো পবিত্রতা নষ্ট হয়ে গেলেও আমরা বুঝতে পারবো
না এবং এ পরিস্থিতিতে আমাদের নামাজ হবেনা ।তাই চলুন সঠিক ভাবে ওযু ভঙ্গের কারণ
গুলো জেনে নেয়া যাক।ওযু ভঙ্গের কারণ গুলো হলো,
পেশাব পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হলে
দেহের কোন স্থান দিয়ে গড়িয়ে যায় এমন পরিমাণ রক্ত ইত্যাদি বের হলে
জ্ঞান হারালে বা বেহুশ হলে
মাতাল হলে
মুখ ভরে বমি করলে
নামাজের মধ্যে দাঁত বের হয়ে পড়ে এমনভাবে খিলখিল করে হাসলে
নারী পুরুষের গুপ্তস্থান একত্র করলে
নিদ্রা গেলে
পাগল হয়ে গেলে
চিত ,কাত, উপুড়, বা এক চোতড়ে হেলান দিয়ে ঘুমালে
ওযুর ফরজ ও সুন্নত কয়টি
ওযু ভঙ্গের কারণ গুলো জানার পরে এবার আপনাদের জানাবো ওযুর ফরজ ও সুন্নত কয়টি ও
কি কি তা সম্পর্কে । আমাদের মধ্য অযুর নিয়ম অনেকেই জানলেও ,অনেক মানুষই জানেনে
ওযুর ফরজ ও সুন্নত কয়টি ।তাই চলুন ওযুর ফরজ ও সুন্নত কয়টি এই বিষয়টিও আজ জেনে
নেয়া যাক।আমরা
ওযুর ফরজঃ ওযুর ফরজ ৪টি-
মুখমণ্ডল (কপালে চুল ওঠার স্থান থেকে চিবুকের নিচ এবং এক কান থেকে আরেক কান
পর্যন্ত) ধৌত করা
দুই হাত কুনুইসহ একবার ধৌত করা
মাথার চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ করা
টাখনুসহ দুই পা ১ বার ধৌত করা
ওযুর সুন্নত- ওযুর ভেতরে বেশ কিছু কাজ আছে যে কাজ গুলো করা সুন্নত। অযুর সুন্নত
কাজ হলো ১৫টি এবং ওযুর সুন্নত গুলো নিম্নরুন।
দুই হাত কবজি পর্যন্ত তিনবার ধোঁয়া
বিসমিল্লাহ বলে ওযু শুরু করা
ওজুর নিয়ত করা
মেসওয়াক করা
এক অঙ্গ ধোয়ার পর অপর অঙ্গ ধুতে বিলম্ব না করা
কুলি করা
গড়গড়া করা
নাকের ভেতরে পানি পৌঁছানো
কান মাসেহ করা
সমস্ত মাথা মাসেহ করা
প্রতিটি অঙ্গ তিনবার করে ধোঁয়া
হাত-পায়ের আংগুল খিলাল ও মর্দন করা
দাড়িঁ ঘন হলে খিলাল করা
পর্যায়ক্রম অনুসারে অজুর অঙ্গগুলো ধৌত করা
মাথা মাসেহের সময় মাথার সামনের অংশ থেকে মাসেহ শুরু করা
ওযুর নিয়ত
নওয়াইতু আন্ আতাওয়াজজাআ রাফআ'ল্লিল হাদাছী ওয়াছতিবাহাতাল্লিছ্ ছালাহি ওয়া
তাক্কাররুবান ইলাল্লাহি তাআ'লা। । অর্থ: নাপাকী দূর করে ও শুদ্ধভাবে নামাজ পড়ার
এবং আল্লাহ তায়ালার নৈকট লাভের নিমিত্ত আমি অজু করার নিয়ত করলাম।
ওযু করার নিয়ম
ওযু করার সময় কনিষ্ঠ আঙ্গুলের ন্যায় চিকন এক বিঘা লম্বা একটি তাজা ডাল দ্বারা
মেসওয়াক করবে। অতঃপর কারো সাথে কথা না বলে অন্যের সাহায্য না নিয়ে নিজেই
সম্পন্ন করার চেষ্টা করবে। ডান দিক থেকে ধোঁয়া শুরু করবে প্রথমে কব্জি পর্যন্ত
দুই হাত তিনবার ধুবে। তারপর তিনবার কুলি করবে ও শেষের কুলির সময় গলার ভিতরে পানি
রেখে গড়গড়া করবে। নাকের ভিতরে তিনবার পানি পৌঁছাবে। এরপর কপালের ওপর চুল ওঠার
স্থান থেকে থুঁতনির নিচ পর্যন্ত এবং এক কানের লতি থেকে আরেক কানের লতি পর্যন্ত
পরিষ্কাররূপে তিনবার ধুবে।
পরে দুই হাতের কনুই পর্যন্ত তিনবার পরিষ্কার করে হবে। মনে রাখতে হবে যে হাত
ধোঁয়ার সময় আঙ্গুল গুলি ভালোভাবে মর্দন করতে হবে। হাতে বা আঙ্গুলে গহনা বা আংটি
থাকলে তা এমনভাবে নেড়েচেড়ে দিতে হবে যাতে সর্বত্র পানি পৌঁছে যায়। আরো মনে
রাখতে হবে যে দাঁড়ি খুব ঘন হলে মুখমন্ডল ধোঁয়ার সময় তাও খিলাল করতে হবে। এরপর
দুই হাতের নতুন করে পানি নিয়ে তা একটু ঝেড়ে একবার মাথা মাসেহ করতে হবে। লক্ষ্য
রাখতে হবে যে, দুই হাতের মধ্যমা, তর্জনী ও কনিষ্ঠা আঙ্গুল ও হাতের ওই আঙ্গুলগুলো
সন্নিহিত তালু দিয়ে প্রথমে মাথার সম্মুখ দিক থেকে মাসেহ করে পেছনে নিবে, তারপর
তালুর অবশিষ্ট অংশ দিয়ে মাথার পেছনের অংশ মাসেহ করে সামনের দিকে আনতে হবে। এরপর
দু'শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা কানের ভেতরের অংশ মাসেহ করবে এবং বৃদ্ধ আংগুলের পেট
দ্বারা কানের পেছনের ও উপরের অংশ মাসেহ করবে।
তারপর দুই হাতের পিঠ দ্বারা ঘার মাসেহ করবে। মনে রাখতে হবে যে মাথার চার ভাগের
এক ভাগেরও কম মাসেহ অজু হবে না। তারপরও দু'পায়ের গোছা (গিরা) সহ সমস্ত পা
তিনবার ধুতে হবে। এ সময় পায়ের আঙ্গুলগুলো এমন ভাবে মদন করতে হবে যাতে কোন
অংশে পানি পৌঁছাতে বাকি থেকে না যায়। মনে রাখতে হবে যে, অজুর সময় কোন অঙ্গে
জোরে জোরে পানি নিক্ষেপ করা ঠিক নয়। কোন ওযর না থাকলে বাম হাতে মুখে পানি
দেওয়া উচিত নয় এবং যেকোনো বেহুদা কথা বর্জন করা উচিত। আরো স্মরণীয় যে,
প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পানি খরচ করা খুব অন্যায়। প্রতি অঙ্গ ধৌ কিংবা মাসেহ করার
সময় প্রথমে 'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম' এবং শেষে দরূদ শরীফ পাঠ করা উত্তম।
মন্তব্য, এ পোস্টের মাধ্যমে এতক্ষণে আপনারা নিশ্চয়ই সঠিকভাবে ওযু
ভঙ্গের কারণ এবং ওযুর ফরজ ও সুন্নত কয়টি সহ ওযু সম্পর্কিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়গুলো বিস্তারিত ভাবে জেনে নিয়েছে। আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন আমাদেরকে
সবসময় পবিত্রতা রক্ষা এবং সঠিকভাবে ইবাদতের তৌফিক দান করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url