আপনারা জানেন নামাজ হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত এবং কিয়ামতের দিন আল্লাহ পাক
সর্বপ্রথমে নামাজের হিসাব মানুষের কাছে থেকে প্রথমে আদায় করবেন। শুধু তাই নয়
আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ পাক ৮২ বার যথাযথভাবে নামাজ
পড়তে বলেছেন। তাই নামাজ সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে সঠিক জ্ঞান রাখা আমাদের
দায়িত্ব। আর তাই আজকে এই পোস্টের মাধ্যমে নামাজের ফরজ কয়টি এবং
নারী পুরুষের নামাজের পার্থক্য সম্পর্কে আলোচনা করবে।
প্রত্যেকটি নর-নারীর উপরে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ। নারী-পুরুষ উভয়ের
প্রতি নামাজ ফরজ হলেও নারী এবং পুরুষভেদে নামাজের কিছুটা পার্থক্য রয়েছে,
এই প্রশ্নের মাধ্যমে আজকে আপনাদের সেই বিষয়টি সঠিকভাবে জানাবেন। এই পোস্টটি
মনোযোগ দিয়ে পড়ার মাধ্যমে আপনারা নামাজের ফরজ কয়টি এবং নারী
পুরুষের নামাজের পার্থক্য বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে
পোস্টটি সম্পন্ন করে ফেলা যাক এবং জেনে নেওয়া যাক নামাজের ফরজ কয়টি
এবং নারী পুরুষের নামাজের পার্থক্য গুলো।
সূচিপত্রঃ নামাজের ফরজ কয়টি - নারী পুরুষের নামাজের পার্থক্য
পুরুষ ও স্ত্রীলোকের নামাযের মধ্যে পার্থক্য গুলো হল: ১. তাকবীরে তাহরীমার সময়
পুরুষ আস্তিন ও চাঁদরের ভেতর হতে হাত বের করে কানের লতি পর্যন্ত উঠাবে কিন্তু
স্ত্রীলোক হাত বের না করে কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে। ২. পুরুষ বাম হাতের কব্জি ডান
হাতের বৃদ্ধা ও কনিষ্ঠা আঙ্গুল দ্বারা ধরে নাভি বরাবর বাঁধবে। স্ত্রীলোক বাম
হাতের ওপর ডান হাত রেখে বুক পর্যন্ত (স্তনের উপর) বাঁধবে। ৩. পুরুষ রুকুতে কোমর,
পিঠ ও মাথার সমান করে ঝুঁকবে। স্ত্রীলোক যেতে হাত হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছে এতটুকু
ঝুঁকবে। পুরুষ আঙ্গুলগুলি ফাঁক করে হাঁটু ধরবে।
স্ত্রীলোক আঙ্গুল মিলিয়ে হালকাভাবে হাঁটুর উপর হাত রাখবে। পুরুষ কূনই পাঁজর হতে
পৃথক রাখবে। কিন্তু স্ত্রীলোক কুনই পাঁজরের সাথে মিলিয়ে রাখবে। ৪. সিজদায় পুরুষ
উভয় পা খাড়া করে কুনই মাটি হতে এবং পাঁজর উরু হতে পৃথক রাখবে। স্ত্রীলোক উভয়
পা ডান দিকে বিছিয়ে দিয়ে হাত, বাহু, পেট মাটির সাথে মিলিয়ে সিজদা করবে। ৫.
পুরুষ ডান পা খাড়া করে বাম পা বিছিয়ে তারপর বসবে। স্ত্রীলোক উভয় পা ডানদিকে
বিছিয়ে বসবে। ৬. স্ত্রীলোক আজান ও ইকামত দিবে না। ক্বিরাআ'ত ও তাকবীর উচ্চ শব্দে
বলবে না।
নামাজের আহকাম
নামাজের আহকাম বা শর্ত সাতটি- ১. শরীর পাক- সকল প্রকার নাপাকি হতে নামাযীর শরীর
পাক হতে হবে। ২. কাপড় পাক- নামাযী ব্যাক্তি যে সমস্ত কাপড় পড়বে তা পাক হতে
হবে। ৩. সতর ঢাকা- পুরুষের নাভী হতে হাঁটু পর্যন্ত এবং স্ত্রীলোকের উভয় হাতের
কব্জি, দুই পায়ের পাতা ও মুখমন্ডল ছাড়া সমস্ত শরীরের সতরের অন্তর্ভুক্ত। এর কোন
অংশ প্রকাশ হলে নামাজ হবে না। ৪. জায়গা পাক - যে স্থান বা যে বস্ত্রের উপর
দাঁড়িয়ে নামাজ পড়বে তা পাক হতে হবে। ৫. কিবলা মুখী হয়ে নামাজ পড়া। ৬. নিয়ত
করা- যে ওয়াক্তে যে নামাজ পড়বে তা অন্তরে থাকতে হবে, মৌখিক নিয়ত করা মুস্তাহাব।
৭. ফরজ নামাজ তার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পড়া।
নামাজের আরকান
নামাজের আরকান ছয়টি- ১. তাকবীরে তাহরীমা অর্থাৎ দুনিয়াবী সমস্ত কাজকর্ম
চিন্তা ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে "আল্লাহু আকবার" বলে নামাজ আরম্ভ করা। ২. ক্বিয়াম
অর্থাৎ দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া। তবে দাঁড়াবার ক্ষমতা না থাকলে বসে, বসার ক্ষমতা
না থাকলে শুয়ে ইশারায় নামাজ পড়তে হবে। ৩. ক্বিরাআ'ত অর্থাৎ কোরআন পাক হতে
কিছু অংশ পাঠ করা। যেমন- বড় এক আয়াত বা ছোট তিন আয়াত পরিমাণ পাঠ করা। ৪. রুকু
করা। ৫. সিজদা করা। ৬. শেষ বৈঠকে বসা ( তিন বা চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজে
দু'রাকাআ'ত পড়ে বসা ওয়াজিব)
নামাজের ফরজ কয়টি
দুঃখজনক হলেও একথা সত্য যে অনেক নামাজী ব্যক্তি আছে যারা এখনো হয়তো সঠিকভাবে
জানেন না নামাজের ফরজ কয়টি। তাই আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করব নামাজের ফরজ
কয়টি এবং কি কি এই বিষয়। যারা এখন পর্যন্ত নামাজের ফরজ কয়টি জানেন
না তারা অবশ্যই এ বিষয়টি ভালোভাবে জেনে রাখুন।চলুন আর দেরি না করে আমরা
জেনেনি নামাজের ফরজ কয়টি।নামাজের ফরজ মোট ১৪ টি।নামাজের মধ্যে ফরজের পরে যে
কাজগুলো অবশ্য করণীয় তাকে ওয়াজিব বলা হয়। এর কোনো একটি ভুলে কিংবা ইচ্ছা করে
ছেড়ে দিলে মাখরুহে তাহরীমী হবে। ফরজ ওয়াজিবের মধ্যে পার্থক্য হলো এই যে, ফরজ
বাদ পড়লে নামাজ দোহরাতে হবে আর ওয়াজিব বাদ পড়লে এবং নামাজের মধ্যে স্মরণ হলে
সোহ সিজদা করলে নামাজ আদায় হয়ে যাবে। নিম্নে নামাজে ওয়াজিবগুলি দেওয়া হলো: ১.
ফরয নামাজের প্রথম দুই রাকাতে ও অন্যান্য নামাজের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহা
পড়া। ২. ফরজ নামাজের প্রথম দু রাকাতে ও অন্যান্য নামাজের প্রত্যেক রাকাতে
ফাতিহার সাথে অন্য সূরা বা আয়াত মিলিয়া পড়া। ৩. নামাজের যাবতীয় নিয়মগুলোর
ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। ৪. তা'দিলে আরকান অর্থাৎ রুকু সেজদায় কমপক্ষে এক তসবি
পরিমাণ সময় কাটানো। ৫. প্রথম দু'রাকাতে ক্বিরাত পড়া। অর্থাৎ দু'রাকাতে কিরাআ'ত
পড়া ফরজ। চাই প্রথম দু'রাকাতে হোক বা শেষ দু'রাকাতে হোক। কিন্তু প্রথম দু'রাকাতে
পড়া ওয়াজিব। ৬. প্রথম বৈঠক অর্থাৎ ৩ বা ৪ রাকাত বিশিষ্ট নামাজে দু'রাকাতে পরে
বসা। ৭. প্রথম ও শেষ রাকাতে তাশাহহুদ পড়া। ৮. বেতরের নামাজ দুআ'তে কুনুত পড়া।
৯. উভয় ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবির বলা। ১০. এসব নামাযে ক্বিরাত
উচ্চস্বরে পড়তে হয়, সে নামাজে উচ্চস্বরে কেরাত পড়া। ১১. যে সব নামাযে ক্বিরাত
চুপে চুপে পড়তে হয় সে নামাযে উচ্চৈস্বরে ক্বিরাত। ১২. সালাম ফিরিয়ে আসসালামু
আ'লাইকুম বলে নামা্যে শেষ করা। ১৩. ইমামের অনুসরণ করা। ১৪. জুমুআ'র নামাযে ইমামের
খুৎবা পাঠ করা এবং মুকতাদীদের মনোযোগের সাথে তা শোনা।
নামাজের সুন্নত
১. তাকবীরে তাহরীমা পড়ার সময় পুরুষের উভয় হাত কানের লতি পর্যন্ত এবং
স্ত্রীলোকের উভয় হাত কাধ পর্যন্ত উঠান। ২. হাত উঠাবার সময় উভয় হাতের আঙ্গুল
স্বাভাবিকভাবে ফাঁকা রাখা। ৩. জামায়াতের নামাজে ইমাম তাকবীর জোরে বলা । ৪. সানা
পড়া। ৫. আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পাঠ করা। ৬. সূরা ফাতিহার পরে আস্তে আমিন বলা।
৭. পুরুষ নাভি বরাবর ও স্ত্রীলোক ছীনা বরাবর হাত বাধা । ৮. রুকুতে যাওয়ার সময়
"আল্লাহু আকবার", ওঠার সময় "সামিআল্লা- হুলিমান হামিদা ও মুকতাদী দাঁড়িয়ে
রাব্বানা লাকাল হামদ্ বলা। ৯. রুকু অবস্থায় আঙ্গুল ফাঁক করে উভয় হাঁটু ধরা,
স্ত্রীলোকগণ কেবল হাঁটুতে হাত রাখবে। ১০. রুকু সিজদায় কমপক্ষে তিনবার তসবি পড়া।
১১. তাশাহহুদের পর দরূদ শরীফ ও দুআ'তে মাছুরা পড়া। ১২. ডান ও বাম দিকে সালাম
ফিরান। ১৩. সিজদায় দু'হাঁটু ও দু'হাত মাটিতে রাখা। ১৪. দু'সিজদাহের মাঝে কিছুক্ষণ
বসা। ১৫. বসে অবস্থা পুরুষ ডান পা খাড়া করে বাম পায়ের পাতা বিছিয়ে তার ওপর বসা
এবং স্ত্রীলোক উভয় পা বিছিয়ে দিয়ের নিতম্বের ওপর বসা । ১৬. রুকু হতে সোজা হয়ে
দাঁড়ানো। ১৭. শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়াতুর পর দরুদ ও দুআ'তে মাসুরা পড়া। ১৮. নামাজে
এক রোকন হতে অন্য রোকনে যাওয়ার সময় তাকবির বলা। ১৯. ইকামতের পরক্ষণেই নামাজ
আরম্ভ করা। ২০. সালাম ফেরাইতে মুখ ঘুরানো। ২১. ফরজের শেষ দুই রাকাতের সুরা ফাতেহা
পাঠ করা
নামাযের মুস্তাহাব
নামাজের মুস্তাহাব গুলো হলো-১. ইকামতে মুয়াজ্জিন হাইয়া আলাচ্ছালাহ বললে
দাঁড়ান। ২. ক্বাদ কামাতিস সালাহ্ বলার সময় ইমামের নামাজ আরম্ভ করা। ৩.
তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় দু'হাত চাঁদর বা আস্তিন হতে বের করা। ৪. দাঁড়ান
অবস্থায় সিজদার জায়গায়, রুকু অবস্থায় পায়ের দিকে, সিজদা অবস্থায় নাকের
অগ্রভাগের দিকে, বসা অবস্থায় কোলের দিকে এবং সালামের সময় কাঁধের দিকে দৃষ্টি
রাখা। ৫. হাই আসলে দাঁড়ান অবস্থায় ডান হাতের তালু দ্বারা অন্যান্য অবস্থায়
বাম হাতের পিঠ দ্বারা মুখ বন্ধ রাখা। ৬. যথা সম্ভব কাশি না দেওয়া। ৭. রুকুতে
মাথা, পিঠ ও কোমর বরাবর রাখা। ৮. সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে দু'হাঁটু, তারপর
দু'হাত, তারপর নাক সর্বশেষে কপাল মাটিতে রাখা। সিজদা থেকে ওঠার সময়ে এর
বিপরীত করা। ৯. সিজদায় উভয় হাতের মাঝে মাথা রাখা। ১০. দাঁড়ানো অবস্থায় উভয়
পায়ের মাঝখানে চার আঙ্গুল ফাঁক রাখা। ১১. রুকু সিজদায় তাসবীহ বেজোড় সংখ্যায়
পড়া ৩/৫/৭ বার। ১২. সিজদায় পুরুষের উভয় কুনুই, উরু ও পেট মাটি হতে পৃথক রাখা
এবং উভয় পায়ের পাতা খাড়া রাখা। কিন্তু স্ত্রীলোকের উভয় পা ডান দিকে বিছিয়ে
হাত, পেট ও উরু মাটির সাথে মিলিয়ে সিজদাহ করা ১৩. ফজর ও জোহরের ফরজ নামাজে
"তাওয়ালে মুফাচ্ছাল" অর্থাৎ সূরা হুজরাত হতে সূরা বুরুজ পর্যন্ত, আসর ও এশায়
'আওছাতে মুফাচ্ছাল' অর্থাৎ সূরা তারিক হতে লামিইয়াকুম পর্যন্ত, মাগরিবে
'কেছারে মুফাচ্ছাল' অর্থাৎ সূরা ইযাযুল যাল হতে নাস পর্যন্ত পড়া। ১৪. তারতীব
মত কুরআন তিলাওয়াত করা। ১৫. হাত পায়ের আঙ্গুল স্বাভাবিক অবস্থায় কিবলামুখী
করে রাখা। ১৬. বসা অবস্থায় দু'জানুর উপরে দু'হাত রাখা। ১৭. নামাযে মৌখিক নিয়ত
করা।
মন্তব্য, উপরই উক্ত আলোচনাটি মনোযোগ সহকারে পড়ার মাধ্যমে এতক্ষণে
নিশ্চয়ই আপনারা নামাজের ফরজ কয়টি এবং নারী-পুরুষের নামাজের পার্থক্য
সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিয়েছেন। পৃথিবীতে আমাদের আগমন যেহেতু একমাত্র
আল্লাহর ইবাদত করা এবং ইবাদতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলো নামাজ তাই আমাদের
সকলের যথাযথভাবে নামাজ আদায়ের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া উচিত। আর
আপনারা জানেন সর্বোত্তম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত নামাজ আর নামাজ হল
বেহেস্তের চাবি। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের তৌফিক দান
করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url