বেলের শরবতের উপকারিতা - বেল খাওয়ার সঠিক সময়
আজকে আপনাদেরকে সহজলভ্য একটি ফল এবং যেই ফলটি সকলের কাছে অতি পরিচিত বেল নামক ফলটির উপকারিতা সম্পর্কে জানাবো। দামের দিক থেকে সহজলভ্য হলেও উপকারিতার দিক থেকে এই ফলটির দামি ফলের চাইতে কোন অংশে পিছিয়ে নেই। বেল খাওয়ার মাধ্যমে আমরা শরীরের পুষ্টির চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণ করার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ থেকেও মুক্ত থাকতে পারি। তাই আজকে আপনাদেরকে বেলের শরবতের উপকারিতা এবং বেল খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে জানাবো।
এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনারা বেলের শরবতের উপকারিতা এবং বেল খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে জানতে পারার পাশাপাশি বেলের অপকারিতা , বেলের ভেতরে কোন কোন ভিটামিন আছে , কাঁচা বেলের উপকারিতা এ বিষয়গুলো বিস্তারিত ভাবে জানতে পারবেন। আমরা অধিকাংশ মানুষই জানি বেল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে কিন্তু এছাড়াও যে বেলের আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে সে বিষয়ে অনেকেই অজানা। তাই আজকে আপনাদেরকে বেলের শরবতের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো কেননা এই সহজলভ্য ফলটির মাধ্যমে আপনি পেতে পারেন অনেক উপকারিতা । তাহলে চলুন দেরি না করে বেলের শরবতের উপকারিতা - বেল খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
বেলের শরবতের উপকারিতা
বেল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী এবং শরীর ভালো রাখতে বেলের শরবতের উপকারিতা রয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রেই।অনেকেই এই ফলটি খুব একটা পছন্দ না করলেও এর মধ্যে লুকিয়ে আছে অসাধারণ কিছু উপকারিতা , তাই এখন আপনাদের জানাবো বেলের শরবতের উপকারিতা সম্পর্কে। তাহলে আর দেরি না করে চলুন সহজলভ্য এই ফলটি অর্থাৎ বেলের শরবতের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে যাক।
আলসার দূর করেঃ আনসারের রোগীদের ক্ষেত্রে বেলে শরবতের উপকারিতা অনেক বেশি , রেলের শরবত আলসার দূর করতে সাহায্য করে। কয়েক মাস যদি নিয়মিত বেলে শরবত সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন খেতে পারেন তাহলে পেপটিক আলসারের রোগীরা এই রোগ থেকে অনেকটাই উপশম পাবেন
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়ঃ বেলের শরবত যে আমাদেরকে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় এই কথাটি হয়তোবা আপনারা অনেকেই জানেন। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তারা বেলে শরবত খেলে উপকার পাবেন। নিয়মিত দুই থেকে তিন মাস যদি বেলের শরবত খাওয়া যায় তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে এবং পেট পরিষ্কার থাকবে।
ডায়রিয়া ভালো করেঃ শুধু কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেই নয় ডায়রিয়া ভালো করতেও বিশেষ সাহায্য করে থাকে বেলের শরবত। ডায়রিয়া থেকে মুক্ত থাকতে বেলের শরবত খেতে পারেন অথবা কাঁচা বেল কেটে রোধে শুকিয়ে এর সাথে ব্রাউন সুগার এবং গরম পানি মিশিয়ে খেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ আনারসের উপকারিতা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করেঃ শরীরের শর্করা কমাতে সাহায্য করে এমন একটি উপাদান রয়েছে বেলের ভেতরে , যেই উপাদানটির নাম হলো নাম হলো মেথানল। মেথানল নামক এই উপাদানটি থাকার কারণে বেলে শরবত খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে ভালো ফল পাওয়ার জন্য আপনাকে খেতে হবে বেলের শরবতের সাথে চিনি না মিশিয়ে অথবা সরাসরি বেল খেতে হবে।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করেঃ ডায়াবেটিসের পাশাপাশি ব্লাড প্রেসারও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে বেল। তাই যারা হাই ব্লাড প্রেসারের রোগী রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বেলের শরবত অত্যন্ত উপকারী কেননা বেলের শরবত আপনার ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
লিভার ভালো রাখেঃ বিটা ক্যারোটিনের একটি বড় উৎস হল বেল। আর আমাদের লিভার সুস্থ রাখতে এই বিটা প্যারোটিনের অবদান অনেক বেশি। তাই লিভার ভালো রাখতে এবং সুস্থ রাখতে নিয়মিত বেলের শরবত খেতে পারেন। বিটা ক্যারোটিনের পাশাপাশি বেলে রয়েছে থায়ামিন এবং রিবোক্লাবন নামক উপাদান গুলো তার এই উপাদান গুলো লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
যক্ষা রোগ সারাতে সাহায্য করেঃ এন্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান থাকায় বেলের শরবত খেলে যক্ষা রোগ থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। তবে যক্ষা রোগ থেকে সেরে উঠতে আপনাকে বেলের শরবতের সাথে ব্রাউন সুগার এবং মধু মিশিয়ে খেতে হবে। নিয়মিত আপনি যদি এক থেকে দেড় মাস এই শরবত খেতে পারেন তাহলে সহজে যক্ষা রোগ থেকে সেরে উঠতে পারবেন।
রক্ত পরিষ্কার করেঃ বেলের শরবত আমাদের রক্ত পরিষ্কার করতেও বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। বেলের ভেতরে এমন কিছু পুষ্টি গুণ রয়েছে যেগুলো আমাদের দেহের অভ্যন্তরে প্রবাহিত হওয়ার রক্তগুলোকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ আমাদের সকলের মাঝেই ক্যান্সার একটি আতঙ্কের নাম কিন্তু আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন না বেলের ভেতরে যে উপাদান গুলো রয়েছে সেগুলো ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে এবং ক্যান্সারের সিল ড্যামেজ করতেও বিশেষ সাহায্য করে থাকে। বেলের ভিতরে থাকা উচ্চমাত্রার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শুধু ক্যান্সার এর সেল ডেমেজ করতে নয় টিউমার রোধ করতেও সাহায্য করে।
বাতের সমস্যা দূর করেঃ বাত নামক রোগটি এখন শুধু বয়স্কদের মধ্যেই নয় অনেক কম বয়সী মানুষের ক্ষেত্রেও দেখা যায়। কিন্তু এই রোগ থেকে সেরে ওঠার সহজ একটি মাধ্যম হলো বেল। বেলের ভেতরে থাকা এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান বাতের ব্যথা এবং বাতের সমস্যা থেকে যেকোনো বয়সী মানুষের মুক্তি দিতে সাহায্য করে।
স্কার্ভি রোগ দূরে রাখেঃ স্কার্ভি রোগটি সাধারণত ভিটামিন সি এর অভাবের কারণে হয়ে থাকে। শরীরে ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ করে স্কার্ভি নামক রোগ থেকে দূরে রাখে বেল। তাই স্কার্ভি রোগ দূরে দূরে থাকার জন্য বেলের শরবত খেতে পারেন কারণ বেল হল ভিটামিন সি এর একটি বড় উৎস। আর এই কারণেই বেলের শরবত খেলে ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ হয় এবং স্কার্ভি নামক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
ম্যালেরিয়া রোগ দূর করেঃ বেলের শরবতের আরেকটি উল্লেখযোগ্য গুন হলো এটি ম্যালেরিয়া রোগ সারাতে সাহায্য করে। তুলসী পাতার রসের সঙ্গে বেলের শরবত এবং মধু মিশিয়ে খেলে ম্যালেরিয়া রোগ দূর করতে এটি বিশেষ সাহায্য করে।
কাঁচা বেল খাওয়ার উপকারিতা
বেলের শরবতের উপকারিতা আপনাদেরকে আগেই জানিয়েছি , এবার আপনাদেরকে কাঁচা বেল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানাবো। আপনারা অনেকেই কাঁচা বেল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানেন না তাই বিষয়টি ভালোভাবে জেনে নিন কেননা এই সহজলভ্য ফলটির মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি পেতে পারেন অনেক উপকারিতা যেমন -কাঁচা বেল কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে পারি এছাড়াও কাঁচা মেলে প্রচুর পরিমাণে এন্ট্রি প্রলেফেরেটিভ , এন্টিঅক্সিডেন্ট , এন্টি মোটাজিন উপাদান থাকায় ক্যান্সার নামক রোগ থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে।কাঁচা বেল শরীরের ভিটামিন সি এর চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করতে সাহায্য করে যার ফলে স্কার্ভি নামক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না এবং এর ভেতরে থাকা প্রোটিন আমাদের শরীরের শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।
বেল খাওয়ার সঠিক সময়
আপনাদের ভেতরে অনেকেই বেল খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে জানতে চেয়ে থাকেন আর বেল খাওয়ার সঠিক সময় জেনে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। উপকারী ফল বলেই যখন তখন খেলেই এর স্বাস্থ্য উপকারিতা পুরোপুরি ভাবে পাওয়া যাবে না আর তাই বেল খাওয়ার সঠিক সময় সময় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখতে হবে। এই কারণেই এখন আপনাদের বলব বেল খাওয়ার সঠিক সময়।
বিশেষজ্ঞদের মতে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে বেল খাওয়ার উত্তম সময় অর্থাৎ বেল থেকে পরিপূর্ণরূপে স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে হলে খালি পেটে খেতে হবে। ভরা পেটে বেল খাওয়ার চেয়ে খালি পেটে বেল খাওয়া বেশি ভালো, কেননা ভরা পেটে বেল অথবা বেলের শরবত খেলে অস্বস্তি কর সিচুয়েশন তৈরি হতে পারে তাই বেল খেতে হবে সকাল বেলা খালি পেটে এতে সারাদিনের এনার্জি পাওয়া যাবে।
বেলে কোন কোন ভিটামিন আছে
আপনারা কি জানেন বেলের বেলে কোন কোন ভিটামিন আছে ? যদি না জেনে থাকেন তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক বেলে কোন কোন ভিটামিন আছে। বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ। এছাড়াও পুষ্টি উপাদানের মধ্যে বেল থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় ক্যালসিয়াম , পটাশিয়াম, ফসফরাস , প্রোটিন , ক্যারোটিন , কার্বোহাইড্রেট , ফাইবার , থায়ামিন , শর্করা ইত্যাদি।
বেল খাওয়ার অপকারিতা
আপনাদের মধ্যে অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন বেল খাওয়ার অপকারিতা বা বেল খেলে কোন সমস্যা হবে কিনা সেই বিষয়ে। তা এখন আপনাদের সাথে বেল খাওয়ার অপকারিতা নিয়ে কথা বলব। সাধারণত বেল খাওয়ার বিশেষ কোন অপকারিতা বা খারাপ দিক নেই। তবে যেহেতু অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না সুতরাং উপকারী ফল বলেই মাত্রাতিরিক্ত বেল খাওয়াও ঠিক নয় কারণ অতিরিক্ত মাত্রায় বেল খেলে এসিডিটি অথবা পেটের সমস্যা হতে পারে এবং এসিডিটি বেড়ে যাওয়ার জন্য দেখা দিতে পারে পাতলা পায়খানা। আশা করি বেল খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
আরো পড়ুনঃ মধু খাওয়ার উপকারিতা
মন্তব্য , এতক্ষণের আলোচনার মাধ্যমে আপনারা জানতে পেরেছেন বেলের শরবতের উপকারিতা এবং বেল খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে। যেহেতু বেলের মাধ্যমে খুব সহজেই শরীরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপকারিতা পাওয়া যায় এবং স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এই ফলটি বিশেষ কার্যকরী তাই সহজলভ্য এই ফলটিকে অবহেলা না করে অবশ্যই স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে অপরকে জানতে সাহায্য করুন এবং সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য নিয়মিত এই ফলটি খাওয়ার চেষ্টা করুন কেননা এই ফলটির অপকারী দিক খুবই কম এবং নাই বললেই চলে তাই পুষ্টিগুনে ভরা বেলের শরবতের মাধ্যমে আপনার দিনটি শুরু করুন এবং সারাদিন এনার্জিটিক থাকুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url