মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর - মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সময়সূচি

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জাগ্রত করতে এবং স্বদেশ প্রেম উদ্বুদ্ধ করতে সাহায্য করে। তাই আমাদের সকলেরই উচিত , সময় পেলেই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ঘুরে আসা। আজকে আপনাদেরকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং এই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সময়সূচি জানাবে। পরিবার পরিজন এবং বন্ধু-বান্ধবের সাথে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিদর্শন এবং করা উচিত এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো জেনে রাখা উচিত।

মুক্তিযুদ্ধ হল আমাদের মুক্তির ইতিহাসের গৌরব উজ্জ্বল একটি অধ্যায় আর এই অধ্যায়কে চির স্মরণীয় করে রাখার জন্য তৈরি করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। এই জাদুঘরে আপনি মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বিভিন্ন অজানা তথ্যগুলো জানতে পারবেন এবং সেই সাথে আপনার ভেতরে স্বদেশ প্রেম উজ্জীবিত এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত হতে সাহায্য করবে। তবে দেশের এখনো অনেক মানুষই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য গুলো জানে না। তাই আজকে আপনাদেরকে কষ্টের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলো জানাবো। আর এই তথ্যগুলো জানার জন্য অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বিষয়কে পোস্টটি পড়ুন।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে


মুক্তিযুদ্ধ বাঙ্গালী জাতির জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে যে শোষণ ও অত্যাচারের শুরু হয়েছিল তার অবসান ঘটে এই যুদ্ধের মাধ্যমে। সমগ্র জাতির দেশের মুক্তির জন্য আত্মোৎসর্গের চেতনায় নিজেদের উজাড় করে দিয়েছে এই যুদ্ধে। ফলে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের গর্ব। আমাদের অহংকার। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বাঙালি জাতির কাছে স্বর্ণময় এক গৌরবজ্জ্বল অধ্যায়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মদের জানানোর জন্য সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগ কে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রবেশপথের মুখেই রয়েছে 'শিখা চির অম্লান'। তারকা আকৃতির একটি বেদির উপর জ্বলছে অনির্মাণ শিখা। তার পেছনে পথের খোদাই করা আছে এক দৃঢ় অঙ্গীকার:

  • সাক্ষী বাংলা রক্ত ভেজা মাটি
  • সাক্ষী আকাশে চন্দ্রতারা 
  • ভুলি নাই শহীদদের কোন স্মৃতি 
  • ভুলবো না কিছুই আমরা।
দোতালা বিশিষ্ট মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মধ্যে রয়েছে ছয়টি গ্যালারি: নিচ তলায় তিনটি ও দোতালায় তিনটি। প্রথম গ্যালারির নিদর্শনগুলো দুটি পর্বে বিন্যস্ত। প্রথম পর্বে প্রদর্শিত হয়েছে বাংলার হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি যেমন, সিলেট অঞ্চলের প্রাপ্ত ফসিল, পাহাড়পুর ও সোমপুর বিহারের মডেল, ভুটান থেকে পাওয়া শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্করের মূর্তি, বাগেরহাটের বিখ্যাত ষাটগম্বুজ মসজিদের মডেলসহ বিভিন্ন মসজিদের টালির নিদর্শন এবং মন্দিরের পোড়ামাটির কারূকাজ। এসবের পাশাপাশি এখানে রয়েছে নানা সময়ের মুদ্রা তালপাতা লিপি ও তুলট কাগজে লেখা মনসামঙ্গল কাব্যের অংশ বিশেষ। দ্বিতীয় পর্বে প্রদর্শিত হয়েছে বিভিন্ন সংগ্রামের চিত্র যেমন: নবাব সিরাজউদ্দৌলার যেখানে পরাজিত হয়েছিল সেই পলাশীর আম্রকাননের মডেল, সিরাজউদ্দৌলা, টিপু সুলতান, তিতুমীর, রাজা রামমোহন রায়ের প্রতিকৃতি, ক্ষুদিরাম বসু, প্রফুল্ল চাকী, যতীন্দ্রনাথ মুখার্জী, মওলানা মোহাম্মদ আলী ও শওকত আলীর ফটোগ্রাফি। 
আরো আছে সিপাহী বিদ্রোহের স্থিরচিত্র, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের শহীদের চিত্র, কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিতা "ধুমকেত" পত্রিকার কপি এবং ১৯৪৩ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের যাকে আমরা "পঞ্চাশের মন্বন্তর বলি" তার করুন দৃশ্যের ছবি। দ্বিতীয় গ্যালারিতে তুলে ধরা হয়েছে পাকিস্তানি আমলের ইতিহাস। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৫৪-র সাধারণ নির্বাচন, ৫৮-র সামরিক শাসন, ৬২-র সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ৬৬-র ৬ দফা আন্দোলন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৯৬-র অভুত্থান, ৭০-র ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাস ও নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন তড়িৎ ছবি ও স্মারক। তৃতীয় গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয়েছে ১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলন, ২৫শে রাত্রিতে সংঘটিত গণহত্যার, স্বাধীনতার ঘোষণা প্রাথমিক প্রতিরোধ, প্রবাসী সরকার সংক্রান্ত ছবি ও শরণার্থীদের জীবনচিত্র। দোতালার তৃতীয় গ্যালারি সাজানো হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য, প্রমাণ ও চিত্র দিয়ে। প্রথমটিতে রয়েছে পাকবাহিনীর নিষ্ঠুরতার ছবি। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা প্রাথমিক প্রতিরোধ, প্রবাসী সরকার এবং সেক্টর কমান্ডারদের নানা তথ্য ও ছবি। পরেরটিতে (পঞ্চম গ্যালারিতে) আছে প্রতিরোধের লড়াই, গেরিলাযুদ্ধ, নৌ-কমান্ডো, বিমানবাহিনী, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন, রাজাকার-দালালদের ভূমিকা এবং সশস্ত্র যুদ্ধের ছবি স্মারক ও বিবরণ। সবশেষ (ষষ্ঠ গ্যালারিতে) রয়েছে গণহত্যা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, বীরশ্রেষ্ঠ, শহীদ বুদ্ধিজীবী চূড়ান্ত লড়াই এবং, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় সম্পৃক্ত বিভিন্ন স্মারক ও বিবরণ। প্রতিটি গ্যালারিতে রয়েছে একজন চৌকশ গাইড। তিনি শরণার্থীদের নানা প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন তাদের কৌতুহল নিবৃত করেন। মুক্তিযুদ্ধের চত্বরে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নানারকম বই, পোস্টার, ক্যাসেট, সিডি স্মারকসামগ্রী বিক্রি জন্য একটি পুস্তকবিপণি, একটি খাবার দোকান একটি উন্মুক্ত মঞ্চ এবং ১০০ আসন বিশিষ্ট একটি চমৎকার অডিটরিয়াম।

জাদুঘরের প্রতিষ্ঠা

১৯৯৬ সালের ২২শে মার্চ ঢাকাস্থ সেগুনবাগিচার একটি দোতলা ভবনে প্রতিষ্ঠা হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। বাংলাদেশের গৌরব মুক্তিযুদ্ধ-সংক্রান্ত তথ্য, প্রমাণ, বস্তুগত নিদর্শন, রেকর্ডপত্র ও স্মারকচিহ্নসমূহ সংগ্রহ ও প্রদর্শনের সুব্যবস্থা করা হয়েছে এখানে। নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠভাবে ঐতিহাসিক ঘটনাধারা দেশব্যাপী সামনে তুলে ধরার রয়েছে বাংলাদেশের কয়েকজন বরেণ্য ব্যক্তির স্ব-উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ জাদুকর প্রতিষ্ঠা করা পরিকল্পনা করেন।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের কার্যক্রম

মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে দেশের মানুষকে সচেতন করতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে। জাদুঘর পরিদর্শনের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পরিবহন সুবিধাসহ এখানে নানা সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের প্রদর্শনীর জন্য একটি গাড়িকে ভ্রাম্যমান জাদুঘরে রুপান্তরিত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুকরের অডিটোরিয়ামে ভিডিও প্রদর্শনের মাধ্যমে আমন্ত্রিত দর্শকদের মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন প্রমাণ্যচিত্র দেখানো হয়। উন্মুক্ত মঞ্চ আয়োজন করা হয়ে থাকে নানা অনুষ্ঠানের। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংগৃহীত স্মারক সংখ্যা প্রায় এগারো হাজার। মুক্তিযুদ্ধ জাদুকর বিশ্বের আরো আটটি দেশের ও সমভাবাপন্ন জাদুঘরের সঙ্গে মিলে " ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অফ হিস্ট্রিক মিউজিয়াম অফ কনসান্স" গঠন করেছে।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কোথায় অবস্থিত

এবার আপনাদের জানাবো মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কোথায় অবস্থিত। অনেকেই জানেন না মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কোথায় অবস্থিত তাই আজকে আপনাদেরকে এই বিষয়টি জানাবেন। আগে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ঢাকার সেগুনবাগীচা এ অবস্থিত থাকলেও বর্তমানে এটি রয়েছে ঢাকার আগারগাঁও রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সময়সূচী

আপনারা যদি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিদর্শন করতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে প্রথমে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সময়সূচি  জেনে নেওয়া দরকার। তাই এখন আপনাদেরকে জাদুঘর সময়সূচী জানাবো। এবং এর মাধ্যমে আপনারা বুঝতে পারবেন সপ্তাহের কোন দিনগুলোতে আপনি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিদর্শন করতে পারবেন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর খোলা থাকে শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০:৩০ থেকে বিকাল ৫ঃ৩০ পর্যন্ত পর্যন্ত এবং শুক্রবার বিকাল তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত। এছাড়াও সাপ্তাহিক ছুটির দিন হিসেবে বৃহস্পতিবার এই জাদুঘর বন্ধ থাকে।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর টিকেট

এবার আপনাদের জানাবো মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর টিকেট মূল্য।মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর টিকেট মূল্য হলো- দেশী নাগরিকদের জন্য ২০ টাকা এবং ৩ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ১০ টাকা , দেশের বাইরে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে থেকে কেউ যদি এই জাদুঘর পরিদর্শন করতে চায় তাহলে তাদের জন্য টিকিটের মূল্য ৩০০ টাকা, এবং সার্কভূক্ত দেশের বাইরে থেকে কেও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ভিজিট করলে তার মূল্য ৫০০ টাকা।
মন্তব্য , যেকোনো জাদুঘর দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে জনসমক্ষে তুলে ধরার মধ্য দিয়ে অতীত ও বর্তমানের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি-স্মারক-দলিলপত্রের একমাত্র সংগ্রহশালা। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে পারে, ভুলে না যায়, সে লক্ষ্যের মুক্তিযুদ্ধে জাদুকর প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা হয়ে এসেছে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url