অবিবাহিত মহিলাদের মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ

 

মাসিক বা পিরিয়ড নারীদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। প্রত্যেক নারীর সাধারণত মাসে একবার হয়ে থাকে। পিরিয়ড নিয়মিত এবং সময়মতো হওয়া ভালো। মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে রয়েছে ডিম্বাশয়ের সমস্যা, হরমোনের সমস্যা এবং পুষ্টির অভাব।

এই সমস্ত সমস্যার কারণে মেয়েদের নিয়মিত মাসিক বা পিরিয়ড হতে অনেক সময় দেরি হয়। আর এই সমস্যা বিবাহিত নারী এবং অবিবাহিত নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই হতে পারে। নিচে আমরা অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ সমূহ এবং এর সমাধান নিয়ে আলোচনা করব।

মেয়েদের মাসিক হওয়ার কারণ

মাসিক মেয়েদের কাছে খুবই পরিচিত একটি বিষয়। এটি সন্তান জন্মদানের সাথে জড়িত। মেয়েদের প্রজনন তন্ত্রের সুস্থতার মূল উদ্দেশ্য হল নিয়মিত মাসিক। একজন নারীর প্রতি মাসে ২ থেকে ৭ দিন মাসিক হয়। তাকে গড়ে প্রায় ছয় বছরের মতো এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বয়ঃসন্ধিকালে একজন নারীর ডিম্বাশয়ের ভেতরে প্রায় ৩-৪ লক্ষ অর্ধপ্রস্তত অনিষিক্ত ডিম্বানু থাকে। এই সময়ে আমাদের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস এবং পিটুইটারি গ্রন্থি প্রতিমাসে বিভিন্ন ধরনের হরমোন নিঃসৃ্ত করে একই সাথে দুটি চক্রের জন্য প্রস্তুতি নেই। একটি হচ্ছে ডিম্বাশয় চক্র এবং অন্যটি জরায়ু চক্র।
যাকে আমরা মাসিক বা ঋতুস্রাব বলি। মাসিকের সময় একজন নারীর দেহ থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মিলিলিটার তরল বের হয়ে যায়। মাসিকের সময় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় যেমন, তলপেটে ব্যথা, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ইত্যাদি। বিশেষ করে এই সমস্যাগুলো অবিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে।

অবিবাহিত মহিলাদের মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ

আমরা হয়তো সবাই জানি মেয়েদের বয়স যখন ১৩ থেকে ১৪ বছর হয় তখন থেকে পিরিয়ড হওয়া শুরু হয়। অনেকের ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে শুরু হয়। আর পিরিয়ড ৫০ বছরের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত হতে পারে। পিরিয়ড অথবা মাসিক সাধারণত ২৮ দিন পরপর হয়। আবার অনেকের ক্ষেত্রে ২৮ দিনের আগেও হলে হতে পারে তবে সেটা যদি নিয়মিত ব্যবধানে হয়। তাহলে এটাকে স্বাভাবিক হিসেবে ধরা। তবে পিরিয়ড যদি নির্দিষ্ট সময়মতো না হয় তখন তাকে অনিয়মিত ঋতুচক্র বলে।
কখনো যদি লক্ষ্য করেন হঠাৎ করে পিরিয়ড হওয়ার বন্ধ হয়ে গিয়েছে এর মানে ডিম্বাণু তৈরিতে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত ডিম্বাণুতে যদি কোন রকম মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি না হয় সেক্ষেত্রে মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার কিছু কারণ রয়েছে এবং মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দিবে। যেগুলো দেখা দিলে অনিয়ন্ত মাসিক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যার ফলে ডিম্বাণু তৈরিতে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। রাতে স্বাভাবিক ঘুম না হলে, শরীরে বেশি লোম গজালে, ঘুমের সময় অতিরিক্ত ঘাম হলে, শরীরের জ্বালা করে শুরু হলে ইত্যাদি বিষয়গুলোকে অবিবাহিত মেয়েদের পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়।
ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাসঃ আমরা হয়তো মাঝে মাঝে নিজেদের শারীরিক যে পরিবর্তন হচ্ছে সেটা বুঝতে পারি। যেমন ধরুন অনেক মেয়েদের ওজন হঠাৎ করে বেড়ে যায় আবার হঠাৎ করে কমে যায়। আর এই ওজনের বেড়ে যাওয়া এবং কমে যাওয়ার ভিন্নতার কারণে মাসিক বন্ধ হয়ে যায়।
থাইরয়েড জনিত সমস্যাঃ থাইরয়েড এমন একটি সমস্যা যে কিনা আপনার দেহে পুরো হরমোন কন্ট্রোল করে থাকে। অনেকের অল্প বয়সেই শরীরের ভেতর হরমোনের তারতম্যের কারণে থাইরয়েড জনিত সমস্যা দেখা দেয়। আর এই সমস্যার কারণে অনেক মেয়েদের মাসিক বন্ধ হয়ে যায়।
ডিম্বাশয়ের অপরিপক্কতার কারণেঃ অনেক সময় দেখা যায় অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের ডিম্বাশয় ভালোভাবে পরিণত হয় না। শরীরের ভেতরে দুই ধরনের হরমোনের অভাবে ডিম্বাশয় গুলো অপরিপক্ক হয়ে থাকে। হরমোন গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন এই দুটি হরমোনের পার্থক্যের কারণে সমস্যা তৈরি হয়। আর এই কারণেই অনিয়মিত মাসিক হয়।
অতিরিক্ত ব্যায়ামের কারণেঃবর্তমানে আমাদের দেশের অনেক মেয়েরাই আছে যারা নিজে দেরকে ফিট রাখার জন্য অনেক ধরনের ব্যায়াম করে থাকে। এই ব্যায়ামের পরিমাণ অতিরিক্ত বেশি হয়ে গেলে মাসিকের সমস্যা দেখা দেয়। অনেকের পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম হয়ে থাকে যার ফলে অনিয়মিত মাসিক হয়।

মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে করনীয়

অনিয়মিত মাসিক মাসিক বন্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ। পিরিয়ড নিয়মিত হলে মাসিক বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। পূর্বে নিয়মিত মাসিক হলেও হঠাৎ করে মাসিক হওয়া বন্ধ হতে পারে। এই সময় ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অনেক জরুরি। নিচে মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে যেসব করণীয় আছে তা উল্লেখ কর হলো-
প্রচুর পরিমাণ পুষ্টিকর খাবার খাওয়াঃঅতিরিক্ত পুষ্টির অভাবে অনেক সময় পিরিয়ড হতে দেরি হয়। শরীরে অতিরিক্ত চর্বি বেড়ে গেলেও পিরিয়ড হতে দেরি হয়। এইজন্য পরিমাণ মতো এবং প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। যাতে করে যাতে করে শরীরে পুষ্টির অভাব দূর হয়। আর এই জন্য পিরিয়ড নিয়মিত হতে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে।
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করাঃআমরা জানি পানির অপর নাম জীবন। তাই আমাদের প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৬ লিটার পানি পান করতে হবে। শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দিলে ডিম্বাশয় তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। যার ফলে এক মাসে পিরিয়ড হলেও অন্য মাসে পিরিয়ড হতে বিলম্ব হয়। পিরিয়ড নিয়মিত হওয়ার জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণঃ আমাদের শরীরে প্রোটিনের অভাব দূর করার জন্য নিয়মিত মাছ, মাংশ, দুধ, ডিম, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি খাবার খেতে হবে। শারীরিক দুর্বলতা ও অনিয়মিত পিরিয়ড দূর করার জন্য প্রোটিনযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলেও অনিয়মিত পিরিয়ড হওয়ার সম্ভাবনা।
নিয়মিত ঘুমের প্রয়োজনঃঅতিরিক্ত অনিদ্রা শরীরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে। ঘুমের অভাবে আমাদের শরীরে মানসিক অবসাদ তৈরি হয়। যার ফলে মানসিক চাপ বেড়ে যায়। আর এর কারণে শরীরে ডিম্বাণুগুলো সঠিকভাবে কার্যক্রম করতে পারেনা। এই জন্য অনিয়মিত পিরিয়ডে সমস্যা দেখা দিতে। অনিয়মিত পিরিয়ড দূর করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের প্রয়োজন।
মন্তব্য ,অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বা পিরিয়ড সঠিকভাবে হওয়া অত্যন্ত। মাসিক বন্ধ হওয়া গর্ভধারণের ক্ষেত্রে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। অনিয়মিত মাসিক বা মাসিক হওয়া বন্ধ হয়ে গেলে দ্রুততার সাথে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url